বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূবর্ব ভারত রেলপথে AS ভাসিতে বল্লভপুরের মানের ঘাটে আপনি গিয়া উপস্থিত হইল। রুদ্র পণ্ডিত একটি ভাস্করের সাহায্যে ইহা হইতে তিনটি বিগ্রহ নিৰ্ম্মাণ করিয়া প্রতিষ্ঠা করিলেন। (পূর্ববঙ্গ রেলপথের “খড়দহ" স্টেশন দ্রষ্টব্য)। বিগ্রহ-প্রতিষ্ঠার কাহিনী শুনিয়া দলে দলে লোক পূজা দিতে আসিতে লাগিল এবং শীঘ্রই ইহার জন্য একটি মন্দির নিৰ্ম্মিত হইল। নদীর ভাঙনের জন্য পুরাতন মন্দির পরিত্যাগ করিয়া বৰ্ত্তমান নূতন মন্দির কলিকাতার মল্লিকগণ কর্তৃক নিৰ্ম্মিত হয়। লর্ড ক্লাইভের মুন্শী সুপ্রসিদ্ধ রাজা নবকৃষ্ণ রাধাবল্লভের বিশেষ ভক্ত ছিলেন এবং ইহার পূজার জন্য বহু দেবোত্তর সম্পত্তি দান করেন। রাধাবল্লভের মুক্তিটি ভাস্কৰ্য্য শিল্পের সুন্দর নিদর্শন। বৈষ্ণবগণের প্রসিদ্ধ দ্বাদশ গোপালের অন্যতম গোপাল কমলাকর পিপলাই এর পাট মাহেশে অবস্থিত । শেওড়াফুলি জংশন—হাওড়া হইতে ১৪ মাইল দূর। এখান হইতে একটি শাখা লাইন ২২ মাইল দরবর্তী প্রসিদ্ধ শৈবতীর্থ তারকেশ্বর পর্য্যস্ত গিয়াছে। এখানে রাজা নামে পরিচিত একঘর প্রাচীন জমিদারের বাস। এই বংশের রাজা মনোহরচন্দ্র বহু চতুষ্পাঠী ও মন্দির স্থাপন করেন। ইনিই মাহেশের প্রসিদ্ধ জগন্নাথদেবের মন্দির নিৰ্ম্মাণ করাইয়া দেন। এখনও রথের দিনে শেওড়াফুলির জমিদার বাটীর অনুমতি লইয়া মাহেশের রথ চালানো হয়। শেওড়াফুলিতে নিস্তারিণী কালীর একটি মন্দির আছে। ইহা রাজা হরিশচন্দ্র কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। এই কালীর মাহাস্থ্য এতদঞ্চলে সুপরিজ্ঞাত। শেওড়াফুলির হাট খুব বিখ্যাত। এই হাট হইতে বহু তরীতরকারী কলিকাতায় আমদানি হয় | বৈদ্যবাট—হাওড়া হইতে ১৫ মাইল দূর। ইহাও একটি প্রাচীন পল্লী । ষোড়শ শতাব্দীতে রচিত বিপ্রদাসের মনসা মঙ্গলে এই গ্রামের উল্লেখ আছে। বিপ্রদাস লিখিয়াছেন যে এই স্থানে গঙ্গাতীরে চাঁদসদাগর একটি নিমগাছে পদ্মফুল ফুটিতে দেখিয়াছিলেন। উহা নিমতীর্থের ঘাট নামে পরিচিত। কেহ কেহ বলেন যে পুরীগমন কালে শ্রীচৈতন্যদেব এই স্থানে গঙ্গার ঘাটে বিশ্রাম করিয়াছিলেন এবং তাহার আদেশে ঘাটের নিকট একটি নিমগাছ রোপিত হইয়াছিল; তদবধি এই স্থান নিমাই তীর্থের ঘাট নামে খ্যাতিলাভ করিয়াছে। বৰ্ত্তমানে অধিকাংশ লোকে এই শেষোক্তনামই ব্যবহার করেন। বৈদ্যবাটীর ভদ্রকালী দেবী বিশেষ জাগ্রত বলিয়া লোকের বিশ্বাস । এই দেবীর নামানুসারে পল্লীর এক অংশের নাম " ভদ্রকালী ” হইয়াছে। বাংলার প্রথম উপন্যাস টেক্‌ চাঁদ ঠাকুর প্রণীত “ আলালের ঘরের দুলাল ”—এ বৈদ্যবাটীর উল্লেখ আছে। শেওড়াফুলির ন্যায় বৈদ্যবাদীতেও একটি বড় হাট আছে। ভদ্ৰেশ্বর—হাওড়া হইতে ১৮ মাইল দূর। ইহাও ভাগীরথী কুলে একটি প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ স্থান । ভদ্ৰেশ্বর শিবের নাম হইতে গ্রামের নাম ভদ্ৰেশ্বর হইয়াছে। সাধারণ লোকের বিশ্বাস যে কাশীর বিশ্বেশুর ও দেওঘরের বৈদ্যনাথদেবের ন্যায়, ভদ্ৰেশ্বরও স্বয়স্তুলিঙ্গ। শিবরাত্রি, বারুণী ও পৌষসংক্রাস্তির সময় এখানে বহু যাত্রীর সমাগম হয়। বিপ্রদাসের “মনসা মঙ্গলে ” ভদ্ৰেশ্বরের উল্লেখ আছে। পূর্বে এ স্থানে অনেকগুলি চতুপাঠ ছিল। এখন অনেক গুলি পাটের কল স্থাপিত হইয়াছে।