বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূবৰ্ব ভারত রেলপথে ?、う চন্দননগরের প্রবর্তক সঙেঘর উদ্যোগে অক্ষয় তৃতীয়ার সময় একটি মেলা হইয়া থাকে। চুচুড়া—হাওড়া হইতে ২৩ মাইল দূর। ওলন্দাজগণের সহিত সংশ্রবের জন্যই চুচুড়ার প্রসিদ্ধি । ইহার পূর্ব ইতিহাস কিছু অবগত হওয়া যায় না। ১৬৩২ খৃষ্টাব্দে পর্তুগীজগণ মুঘল হস্তে বিধবস্ত হইলে ওলন্দাজগণ এদেশের বাণিজ্য ব্যাপারে প্রধান স্থান অধিকার করেন। তাহারা বণিকরূপেই এদেশে আসিয়াছিলেন। কিন্তু ইংরেজ দিগকে শাসন ক্ষমতা অর্জন করিতে দেখিয়া তাহারাও সে দিকে মনোযোগ দেন। মীরজাফর গোপনে তাঁহাদের সাহায্য লইয়া ইংরেজদের প্রাধান্য নষ্ট করিতে প্রয়াস পাইয়াছিলেন। চুঁচুড়া কিছুকাল ব্যাটেভিয়া গবর্ণমেণ্টের অধীন ছিল। • ১৭৫৯ খৃষ্টাব্দে ব্যাটেভিয়া হইতে কতকগুলি ওলন্দাজ রণতরী সৈন্যসামন্ত লইয়া এদেশে উপস্থিত হয়। ইংরেজগণ তখন ওলন্দাজগণকে বাধা প্রদান করেন। এই যুদ্ধে ওলন্দাজগণের সম্পূর্ণ পরাজয় ঘটে এবং তাঁহাদের রণতরীগুলি ধবংস প্রাপ্ত হয়। তদনন্তর ওলন্দাজগণ এদেশে শুধু বাণিজ্য কার্য্যেই লিপ্ত ছিলেন। ওলন্দাজগণের উন্নতির সময়ে তাহারা চুচুড়ায় ফোর্ট গায়টেভাৰ্য নামে একটি দুর্গ নিৰ্ম্মাণ করেন। চুচুড়া অধিকার করিবার পর ইংরেজগণ এই দুগটি ভাঙ্গিয়া ফেলিয়া তৎস্থলে একটি ব্যারাকৃ নিৰ্ম্মাণ করেন। বৰ্ত্তমানে এই ব্যারাকে হুগলী জেলার কাছারী ও কালেক্টরি অবস্থিত। এইরূপ দীর্ঘ অট্টালিকা খুব কমই দেখা যায়। ইংরেজদিগের হস্তে পরাজিত হইবার পরও ওলন্দাজগণ বাণিজ্যসূত্রে বহুদিন পর্য্যন্ত এই দেশে বাস করিয়াছিলেন এবং ব্যবসায়ে যথেষ্ট উন্নতিও করিয়াছিলেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর অষ্টম পাদে তাহাদের বাণিজ্য উন্নতির চরম শিখরে উঠিয়া পড়িতে আরম্ভ করে। ১৮২৫ খৃষ্টাব্দের ৭ই মে ওলন্দাজগণ সুমাত্রার পরিবর্তে ইংরেজগণকে চুচুড়া ছাড়িয়া দেন। ওলন্দাজ শাসনকৰ্ত্তাগণ প্রাচ্য রীতি অনুযায়ী খুব জাকজমকের সহিত বাস করিতেন। চুচুড়াবাসী ওলন্দাজগণ বাঙালীদের সহিত মেলামেশা ও তাঁহাদের রীতিনীতির অনুসরণ করিতেন। তাহাদের মধ্যে অধিকাংশই আহারান্তে আলবোলায় ধূমপান করিতেন। ওলন্দাজদের সময়ে অনেক আর্মেনীয় চুচুড়ায় বাস করিতেন। স্থানীয় আৰ্ম্মানি গির্জাটি খোজা জোহানেসের পুত্র প্রসিদ্ধ আর্মেনীয় মার্কার কর্তৃক ১৬৯৫ খৃষ্টাব্দে নিৰ্ম্মিত হয়। এই গির্জাটি “ সেণ্ট জন দি ব্যাপটিস্ট " এর নামে উৎসর্গীকৃত হয়। আজিও প্রতিবৎসর ২৭এ জানুয়ারী এখানে একটি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ইহা বাংলার সবর্বাপেক্ষা পুরাতন গির্জার মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। হুগলীর মহশীন কলেজ, কলিজিয়েট স্কুল ও মাদ্রাসা চুচুড়ায় অবস্থিত। ইহা স্বনামধন্য দানবীর হাজী মহম্মদ মহশনের অমর কীৰ্ত্তি। এখানকার প্রাচীন কীত্তির মধ্যে আৰ্ম্মেনীয়গণের দ্বারা নিৰ্ম্মিত গির্জা, গঙ্গাতীরবর্তী গিঞ্জ এবং ওলন্দাজ ও আৰ্ম্মেনীয়গণের পুরাতন গোরস্থান উল্লেখযোগ্য। এখানকার আশ্মনিটোলা, মুঘল টুলি, ফিরিঙ্গিটোলা প্রভৃতি পাড়ার নাম চুচুড়ার পূর্ব সমৃদ্ধি ও ইতিহাসের সাক্ষ্য দিতেছে। চুচুড়া ও চন্দননগরের মধ্যবর্তী ভাগীরথী কুলে গোস্বামীঘাটে "কনে’ বেীএর মন্দির” নামে একটি প্রকাও পরিত্যক্ত মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দৃষ্ট হয়, কথিত আছে পূবেৰ্ব ইহা কালীর মন্দির ছিল এবং দেবী সরকার নামে এক ব্যক্তি বাটীর কনিষ্ঠ বধুর ইচ্ছানুসারে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন বলিয়৷ ইহার নাম হইয়াছে “কনে বেীএর মন্দির ”।