পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ Ե * বাংলায় ভ্রমণ বালিতে রাধাকৃষ্ণের ঠাকুরবাড়ী ও চতুরদাস বাবাজী প্রতিষ্ঠিত বড় আখড়া দ্রষ্টব্য স্থান। তিন শত বৎসরেরও পূবেৰ্ব চতুর দাস বাবাজী এখানে আসিয়া আখড়া প্রতিষ্ঠা করেন। বাঁশবেড়িয়ার দক্ষিণাংশ খামারপাড়ায় একটি শাখা আখুড়া আছে। চতুর দাস বাবাজীর সমাধিকে সকলে ভক্তি করে { হুগলীতে মল্লিক কাশীমের হাট নামে পরিচিত একটি বিখ্যাত হাট আছে। ব্যাণ্ডেল জংশন—হাওড়া হইতে ২৫ মাইল দূর। বন্দর কথা হইতে ব্যাণ্ডেল নামের উৎপত্তি হইয়াছে বলিয়া অনুমিত হয়। পূবেৰ্ব ইহা পর্তুগীজগণের অধিকারভুক্ত ছিল। ১৫৫৯ খৃষ্টাব্দে পর্তুগীজগণ এখানে একটি সুবৃহৎ গির্জা নিৰ্ম্মাণ করেন। অনেকের মতে ইহাই বাংলার আদি খৃষ্টীয় উপাসনা মন্দির। ইহার প্রাচীর গাত্রে অনেক উৎকৃষ্ট চিত্র অঙ্কিত আছে। বালক যীশু ও মাত মেরীর মুক্তি এখানে বিশেষ আড়ম্বরের সহিত পূজিত হয় এবং রোগ আরোগ্য ও মনস্কামনা পূর্ণ হইবার আশায় বহু রোম্যান ক্যাথলিক খৃষ্টান এই স্থানে আগমন করিয়া থাকেন। এই গির্জাটি একটি দ্রষ্টব্য বস্তু । এই গির্জাটি একাধিকবার যুদ্ধবিগ্রহে ধবংস ও ভস্মীভূত হইয়াছে। ১৬৩১ খৃষ্টাব্দে মুঘলদের হুস্তে পর্তুগীজগণ পরাজিত এবং মুঘল কর্তৃক হুগলী অধিকৃত হইবার সময় পর্তুগীজগণের দুর্গ ও এই গির্জা ধবংস প্রাপ্ত হয়। মুঘলগণ বহু খৃষ্টানকে বন্দী করিয়া আগ্রায় লইয়া যায়। কথিত আছে, সম্রাট জাহাঙ্গীরের আদেশে বন্দী পাদ্রী দাক্ৰ জকে একটি মত্ত হস্তীর সম্মুখে নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু হস্তী তাঁহাকে পদদলিত না করিয়া শুড় দিয়া আদর করিতে থাকে। ইহা দেখিয়া সম্রাট জাহাঙ্গীর ভীত ও বিসিমত হইয়া দ'ক্ৰ জকে অব্যাহতি দেন এবং তাহার অনুরোধে ব্যাণ্ডেলের গির্জা পুনরায় নিৰ্ম্মাণ করিবার অনুমতি দেন এবং উহার ব্যয় নিববাহের জন্য বহু নিষ্কর জমি প্রদান করেন। মত্ত হস্তীর পদতল হইতে পাদ্রী দাক্রজের আশ্চর্য্যৰূপে রক্ষা পাওয়ার ঘটনাটির স্মরণে আজও প্রতিবৎসর এই গির্জায় “ডোমিংগো দাক্রজ ’ নামে একটি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। প্রবাদ, এই গিজর্জায় মাতা মেরীর যে মৃত্তি আছে উহা পূবেৰ হুগলীস্থ পর্তুগীজ সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠিত ছিল। পাদ্রী দাক্রজ ও তাঁহার এক স্বজাতীয় বণিক বন্ধু এই মুক্তির বিশেষ অনুরক্ত ছিলেন। ১৬৩২ খৃষ্টাব্দের মুঘল পর্তুগীজ সংঘর্ষের সময় উক্ত বণিকু লাঞ্ছনার হাত হইতে এই মূৰ্ত্তিকে রক্ষা করিবার জন্য উহা লইয়া নদীতে ঝাপাইয়া পড়েন, কিন্তু মুক্তি বা তাহার আর কোন সন্ধান পাওয়া যায় নাই। পাদ্রী দাক্রজ ইহাতে অত্যন্ত দুঃখিত হইয়া তাহার অন্তরঙ্গ মুক্তিটির উদ্ধার সাধনের জন্য দিনরাত প্রার্থনা করিতে থাকেন। আগ্রা হইতে মুক্তি পাওয়ারীপুর তিনি ভারতবর্ষ ও সিংহলের খৃষ্টানগণের নিকট হইতে সংগৃহীত অথে ব্যাণ্ডেল গির্জার সংস্কার আরম্ভ করেন। কাজ প্রায় শেষ হইয়া আসিয়াছে এমন সময় একদিন জ্যোৎস্ন রাত্রে গির্জারু মুখে নদীর জল ভীষণভাবে আলোড়িত হইয় উঠে। সেই শব্দে ঘুম ভাঙ্গিয় গেলে পাদ্রী দাঙ্কজ হঠাৎ শুনিতে পাইলেন যেন বহুদিন পূবেৰ্ব জলমগ্ন তাহার সেই অন্তরঙ্গ বন্ধু তাঁহাকে ডাকিতেছেন। তিনি গবাক্ষপথে দেখিতে পাইলেন জ্যোৎস্নালোকে নদীর এক অংশ যেন উদ্ভাসিত হইয়া উঠিয়াছে এবং এক ব্যক্তি গির্জার দিকে আসিতেছে। কিন্তু পর মুহুর্তেই সমস্ত কোলাহল খুমিয়া গেল এবং নদীর আলোকিত অংশ পুনরায় অন্ধকারে আচ্ছন্ন হইল। পরদিন প্রাতঃকালে ঘুম ভাঙ্গিবার পর পাত্রী দা'ক্ৰজ দেখিলেন, বহু লোক গির্জার সম্মুখে একত্র হইয়া বলাবলি করিতেছে “ গুরুমা আসিয়াছেন”।