পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ab বাংলায় ভ্রমণ সপ্তগ্রাম প্রাচ্যের একটি শ্রেষ্ঠ বন্দর হইয়া উঠিয়াছিল। খৃষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগ পৰ্য্যন্ত সরস্বতীর তীরে অবস্থিত গ্রাম ও নগরগুলি বিশেষ ঐশ্বৰ্য্যশালী ছিল। শিয়াখালী, সিঙ্গুর, জনাই, চণ্ডীতলা, বেগমপুর, ঝাপড়দহ, মাকড়দহ, আব্দুল, হরিপাল প্রভৃতি সরস্বতী তীরবর্তী গ্রামগুলি নিরস্তর কৰ্ম্মকোলাহলে মুখরিত হইত। খৃষ্টীয় উনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভ পর্য্যস্ত সপ্তগ্রামে বহু পরিমাণে কাগজ প্রস্তুত হইত। ১২৯৫ খৃষ্টাব্দে রুকন-উদ-দীন কৈকাউন্থ শাহ যখন গৌড়ের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন সেই সময়ে উলুগ-ই-আজমৃ জাফর খাঁ বাহরাম ইৎগীন রাঢ় দেশের তৎকালীন প্রধান নগর সপ্তগ্রাম জয় করেন। যে হিন্দু রাজাকে পরাস্ত করিয়া তিনি সপ্তগ্রাম অধিকার করেন তাহার নাম জানা যায় নাই। কবি কৃষ্ণরামের “ষষ্ঠমঙ্গল” কাব্য হইতে অনুমান করা যায় যে শত্রুজিৎ বা তাহার পরবর্তী কোন রাজার সময়ে সপ্তগ্রাম মুসলমান অধিকারে আইসে। সপ্তগ্রাম জয় করিয়া জাফর খাঁ নিকটস্থ ত্রিবেণীতে একটি বৃহৎ মসৃজিদ নিৰ্ম্মাণ করেন। ইহার একটি খিলানে আবৃবী ভাষায় লিখিত যে লিপি আছে তাহা হইতে জানা যায় যে জাফর খা ৬৯৮ হিজরায় অৰ্থাৎ ১২৯৫ খৃষ্ট দ জনৈক হিন্দ রাজাকে পরাজিত ও এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৩১৩ খৃষ্টাব্দে জাফরীর মৃত্যু হয়। ত্রিবেণীতে তৎকর্তৃক নিৰ্ম্মিত মসজিদের নিকট গঙ্গা-সরস্বতীর মিলনস্থন্ধুে অদূরে একটি পুরাতন প্রস্তরনিৰ্ম্মিত মন্দিরের মধ্যে তাহার দেহ সমাহিত করা হয়। এই মন্দিীশল্পী মসজিদে পরিণত হয় । কাহারও কাহারও মতে জাফর খাঁর অপর নাম দরাফ খা এক্টুর্কি গঙ্গার ভক্ত ছিলেন। সংস্কৃত ভাষায় রচিত একটি গঙ্গাস্তোত্র দরাফু খাঁর নামে প্রচলিত আছে ১২৫০ খৃষ্টাব্দে প্রসিদ্ধ মিশর দেশীয় পৰ্যটক ইবন বতুতা সপ্তগ্রামে আগমন করেন। তাহার লেখা হইতে জানা যায় যে সে সময়ে বল্ববন বংশীয় রাজাদের প্রভুত্ব লোপ পাইলে তাঁহাদের ভূত্য ফকর-উদ-দীন সপ্তগ্রাম ও সুবর্ণগ্রাম অধিকার করেন। গৌড়াপি প্রসিদ্ধ আলা-উদ্দীন হুসেন শাহের সময়ে সপ্তগ্রামের নাম “ হুসেনাবাদ ” রাখা হয়। এখানে একটি টাকশাল ছিল। সপ্তগ্রামে মুদ্রিত সের শাহ, হুসেন শাহ প্রভৃতি বহু মুসলমান নরপতির নামাঙ্কিত মুদ্রা পাওয়া গিয়াছে। - গোড়ের প্রসিদ্ধ নৃপতি সুলেমান কররানি যখন ভূরিশ্ৰেষ্ঠ রাজ্য জয় করিতে উদ্যোগী হন তখন ভূরিশ্ৰেষ্ঠরাজ রুদ্রনারায়ণ ওড়িষ্যারাজ মুকুন্দদেব হরিচন্দনের সাহায্য গ্রহণ করেন। রুদ্রনারায়ণের জ্ঞাতিভ্রাতা বিখ্যাত বীর রাজীবলোচন রায় ভূরিশ্ৰেষ্ঠ ও ওড়িষ্যার সম্মিলিত সেনাবাহিনীর নায়কত্ব গ্রহণ করিয়া ভূরিশ্ৰেষ্ঠ রাজ্য আক্রমণ পূবর্বক সপ্তগ্রামে আসিয়া সুলেমানের সৈন্যগণকে আক্রমণ করেন। ১৫৬৫ খৃষ্টাব্দে রাজীবলোচন কর্তৃক সপ্তগ্রাম অধিকৃত হয়। সপ্তগ্রাম পুনরধিকারের জন্য সুলেমান বহু চেষ্টা করেন কিন্তু পর পর চার বার রাজীবলোচনের নিকট তাহার পরাজয় ঘটে। অত:পর তিনি রুদ্রনারায়ণকে বহু উপঢৌকন পাঠাইয়া দিয়া তাহার সহিত সন্ধি করেন ও সপ্তগ্রাম তাহাকে ছাড়িয়া দেন। প্রাচীন সপ্তগ্রামের সমৃদ্ধ পরিচয় সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের "কপালকুণ্ডলা? ও মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর “ বেণের মেয়ে ” নামক উপন্যাসে বর্ণিত আছে।