পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

br○ বাংলায় ভ্ৰমণ বৌদ্ধশ্রমণ ও মহাস্তগণের সমাধি বলিয়া অনুমিত হয়। একটি সমাধি “ জীবস্ত সমাধি ” নামে পরিচিত। স্থানীয় লোকের বিশ্বাস যে ইহার মধ্যে একজন যোগী নিবিৰকল্প সমাধিতে মগ্ন আছেন। মহানাদের বশিষ্ঠগঙ্গা, জীয়ৎকুণ্ড, জামাইজাঙ্গাল প্রভৃতি দ্রষ্টব্য বস্তু। জীয়ৎকুণ্ড দেবখাত বলিয়া লোকের বিশ্বাস এবং মুসলমানযুগে ইহা অপবিত্র হইবার পূর্বে এই কুণ্ডের জল সিঞ্চনে মৃতদেহেও প্রাণ সঞ্চার হইত বলিয়া প্রবাদ। মহানাদরাজ চন্দ্রকেতুর জামাতা ত্রিপুরার রাজপুত্রের অনুরোধে জামাইজাঙ্গাল নামক রাস্ত নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল বলিয়৷ জনশ্রুতি আছে। পুরাকালে এই স্থানে মহাশঙ্খের নিনাদ হইয়াছিল বলিয়া গ্রামের নাম “মহানাদ " হয় এইরূপ প্রবাদ প্রচলিত আছে। পুণ্ডুয়া—হাওড়া হইতে ৩৮ মাইল দূর। ইহার চলিত নাম পেড়ে। বাংলাদেশে মালদহ জেলায় আরও একটি পাণ্ডুয়া আছে। উহা পূবর্ববঙ্গ রেলপথের আদিনা স্টেশন হইতে তিন মাইল দূরে অবস্থিত। অনেকে অনুমান করেন যে গৌড়ের পাণ্ডুয়ার অনুকরণে হুগলী জেলার পাণ্ডুয়ার নামকরণ হইয়াছে। আবার কাহারও কাহারও মতে ভূরিশ্ৰেষ্ঠরাজ পাণ্ডুদাসের নামানুসারে এই স্থানের নাম পাণ্ডুয়া হয়। এরূপও কথিত আছে, বুদ্ধদেবের খুল্লতাত অমৃতোদন শাক্যের পুত্র পাণ্ডুশাক্য পরিবারবর্গসহ পবিত্র তীর্থ ত্রিবেণীর নিকট গঙ্গাতীরে আসিয়া বাস করেন এবং তথায় একটি রাজ্য স্থাপন করেন। তাহার নামানুসারেই রাজধানী পণ্ডুনগর বা পাণ্ডুয়া নামে খ্যাত হয়। গৌড়রাজ শমস্-উদ-দীন ইউসুফ শাহ (১৪৭৬-১৪৮৩ খৃষ্টাব্দ) পাণ্ডুয়ার হিন্দুরাজ্য জয় করেন। তখন পাণ্ডুয়ায় বহু মন্দির ছিল। এই নগর অধিকার করিয়া মুসলমানগণ এখানকার অতি প্রাচীন সূৰ্য্যমন্দিরকে মসৃজিদে পরিণত করেন। এই মসজিদের ধবংসাবশেষ এখন “ বাইশ দরওয়াজ৷ ” নামে পরিচিত। ইহার মধ্যে হিন্দু মন্দিরের বহু শিলা স্তম্ভ প্রভৃতি দৃষ্ট হয়। মসৃজিদের বেদী বা মেম্বর একটি হিন্দু মন্দিরের গর্ভগৃহ। ব্ৰহ্ম শিলা নিৰ্ম্মিত একটি প্রকাণ্ড সূৰ্য্যমূৰ্ত্তির পশ্চাতে উৎকীর্ণ আরবী শিলালিপি হইতে জানা যায় যে ইউসুফ শাহের রাজ্যকালে ১৪৭৭ খৃষ্টাব্দে মসৃজিদটি নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। ইহার প্রাচীর গাত্রে উৎকীর্ণ লিপি হইতে জানা যায় যে ১৭৬৩ খৃষ্টাব্দে লাল কুনওয়ার নাথ নামক জনৈক হিন্দু এই মসৃজিদের সংস্কার করিয়াছিলেন। ইহা ছাড়া আরও একটি ভগ্ন-মসজিদ আছে। পাণ্ডুয়ায় একটি মিনার আছে। উহার উচচতা ১২৭ ফুট। মিনারটি গোলাকার, পাচতল-ওয়ালা ও উপরদিকে ক্রমশ: সৰু। “পেড়োর পীর’ নামে খ্যাত শাহ্ সুফীউদ্দীন কর্তৃক ইহা নিৰ্ম্মিত হয়। কেহ কেহ বলেন যে এই মিনারটি পূবেব বিষ্ণুমন্দির ছিল। ইহার ভিতরকার দেওয়ালে মীনার কাজ আছে। পীর শাহ স্বকী-উদ্দীনের আস্তান এ অঞ্চলে বিশেষ প্রসিদ্ধ। পাণ্ডুয়ায় রোজাপুকুর ও পীরপুকুর নামে দুইটি দীঘি আছে। বাগেরহাটের খান্ন-জাহান আলীর দীঘির ন্যায় পাণ্ডুয়ার পীরপুকুরে কতকগুলি কুমীর আছে। উহারা ফকিরগণের আহানে কিনারার নিকট পর্য্যন্ত আসিয়া খাদ্যাদি গ্রহণ করে। প্রতি বৎসর ২৯শে পৌষ এখানে মেলা বসে এবং রাত্রি ৩টা হইতে পীরপুকুরে স্নান করিয়া লোকে ধান ও কড়ি ছড়াইতে পীরের আস্তানায় যাইয়া অৰ্ঘ্য নিবেদন করেন। কেহ বা পথে বসিয়া কোরআন আবৃত্তি ও ধৰ্ম্মসঙ্গীত গান করেন। যাত্রীরা পীরপুকুরের জল লইয়া যান। চৈত্র মাসেও একটি.মেলা বলে। تت يوم