পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ SSግ খানির দূতক ছিলেন ব্যাঘ্রতট মণ্ডলের অধিপতি শ্ৰীবল বৰ্ম্ম । দেবপালদেব আফগানিস্থানের অন্তর্গত নিংরাহার নগরের ইন্দ্রগুপ্তের পুত্র বীরদেবকে নালন্দা মহাবিহারের সঙ্ঘস্থবির পদে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। ভট্টগুরব মিশ্রের শিলাস্তম্ভলিপিতে দেবপালদেবের বিস্তৃত রাজ্যের কথা উল্লেখ আছে। (জয়পুরহাট স্টেশন দ্রষ্টব্য।) দেবপালদেব ৮২০ খৃষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করিয়া আন্দাজ ৮৬০ খৃষ্টাব্দে পরলোক গমন করেন। দেবপালদেবের পর প্রথম শুরপাল বা প্রথম বিগ্রহপাল, নারায়ণপাল, রাজ্যপাল, দ্বিতীয় গোপাল ও দ্বিতীয় বিগ্রহপাল এই পাঁচজন রাজার সময়ে প্রথমে গুর্জররাজ ভোজদেব ও মহেন্দ্রপাল এবং পরে হিমালয়ের কম্বোজ জাতির নিকট পাল রাজত্ব বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবং শেষোক্ত রাজার সময়ে পালবংশীয় রাজগণ কম্বোজ জাতি কর্তৃক গোঁড দেশ হইতে বিত্তাড়িত হইয়াছিলেন । খৃষ্টীয় দশম শতাব্দীর শেষ ভাগে দ্বিতীয় বিগ্রহ পালের পুত্র প্রথম মহীপাল রাঢ়ে বা সমতটে পিতৃ সিংহাসন প্রাপ্ত হন এবং শীঘ্রই গোড় মগধ, তিরহুত (মিথিলা) ও বারাণসী পৰ্য্যন্ত রাজ্য বিস্তার করিয়া দ্বিতীয় পাল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময়ে উত্তরাপথের কেকল্লবংশীয় গাঙ্গেয় ও তৎ পুত্র কর্মদেব ও দাক্ষিণাত্যের চোলবংশীয় রাজেন্দ্র চোল ও চালুক্যবংশীয় দ্বিতীয় জয়সিংহ ভারতের সর্বত্র প্রবল প্রতাপে রাজ্যজয় ও বিস্তারে ব্যস্ত থাকিলেও মহীপালদেব যে পিতৃরাজ্যের অনেকাংশ উদ্ধার করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন তাহা তাহার শক্তির সম্যক পরিচায়ক। দিনাজপুরের নিকটস্থ বাণগড়ে মহীপালদেবের এক খানি তাম্রশাসন পাওয়া গিয়াছে। প্রথম মহীপালদেব ভক্ত বৌদ্ধ ছিলেন এবং সারনাথে বহু মন্দির ও চৈত্য প্রতিষ্ঠা করিয়া ছিলেন ও “অষ্টমহাস্থান শৈল-গন্ধকূট” পুননিৰ্ম্মিত করাইয়া ছিলেন। তাহার রাজ্যকালে, আন্দাজ ১০৩০ খৃষ্টাব্দে বৌদ্ধ ভিক্ষুদিগের একটি প্রসিদ্ধ মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হইয়াছিল ; ইহাতে তিববত হইতে ভিক্ষুরাও যোগ দিয়াছিলেন। পালরাজগণের মধ্যে প্রথম মহীপালদেবের খ্যাতির কথা পল্লী গাথা ও গীতিতে বাংলার নানা স্থানে কিছুকাল পূৰ্ব্বেও শ্রত হইত ; কোচবিহার ও ওড়িষ্যার স্থানে স্থানে এখনও তাহার রেশ পাওয়া যায়। প্রথম মহীপালদেব প্রায় অৰ্দ্ধ শতাব্দী ধরিয়া (৯৮৮-১০৩৬ খৃষ্টাব্দ) রাজত্ব করিবার পর পরলোক গমন করিলে তাহার পুত্র নয়পালদেব গৌড় সিংহাসনে আরোহণ করেন; তাহার সময়ে বিক্রমশিলা মহাবিহারের সঙ্ঘস্থবির শ্রীজ্ঞান দীপঙ্কর অতীশ তিববত রাজ কর্তৃক অনুরুদ্ধ হইয়া তথায় গমন করিয়া বৌদ্ধ ধৰ্ম্মে নূতন করিয়া প্রাণ সঞ্চার করেন। নয়পালদেবের পাকশালার অধ্যক্ষ চক্রপাণি দত্ত চরক ও মুশ্রুতের টীকা লিখিয়া খ্যাতি লাভ করেন। নয়পালদেবের মৃত্যুর পর তৎপুত্র তৃতীয় বিগ্রহপাল রাজা হন। চেদীরাজ কৰ্ম্মদেব তাহার রাজ্য আক্রমণ করিয়া পরাস্ত হন এবং তাহার সহিত কন্যা যৌবনশ্রীর বিবাহ দিয়া সন্ধি করেন, কিন্তু কল্যাণরাজ চালুক্যবংশীয় আহবমল্ল গৌড়রাজকে পরাজিত করিয়া স্বদেশে প্রত্যাগমন করেন। তৃতীয় বিগ্রহপালের সময় হইতেই দ্বিতীয় পাল সাম্রাজ্যের অধঃপতন আরম্ভ হয়। তাহার পর তাহার পুত্র দ্বিতীয় মহীপাল অত্যাচারী হওয়ায় ক্ষোশীনায়ক দিব্যক কর্তৃক যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন। সোস্তাহার দ্রষ্টব্য)। দ্বিতীয় মহীপাল দেবের পর তাহার ভ্রাতৃদ্বয় দ্বিতীয় শুরপাল ও রামপাল পরপর ‘গৌড়াধিপতি" বলিয়া ঘোষিত হন।