বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৮
বিবিধ কথা

 একদিন সমাধির অবস্থায় আমার মন একটি আলোকময় পথ ধরিয়া ঊর্দ্ধ হইতে ঊর্দ্ধতর লোকে উঠিতে লাগিল। নক্ষত্রলোক পার হইয়া, সুক্ষ্মতর বিজ্ঞানলোক পার হইয়া আমি উঠিতে লাগিলাম, পথের দুই পার্শ্বে যত দেবদেবীর মানস-মূর্ত্তি দেখিতে দেখিতে এমন দূরতম স্থানে পৌছিলাম যেখানে একটি জ্যোতির রেখা দ্বারা দ্বৈত ও অদ্বৈতের সীমা চিহ্নিত রহিয়াছে। সে সীমাও পার হইয়া আমি অখণ্ডের ঘরে পৌঁছিলাম, দেবতারাও সেখানে দৃষ্টিপাত করিতে সাহস করেন না। কিন্তু পরমুহূর্ত্তেই দেখিলাম সেই জ্যোতির্লোকে সাত জন ঋষি সমাধিস্থ হইয়া আছেন। তাঁহাদিগকে দেখিলে মনে হয়, জ্ঞানে প্রেমে ত্যাগে ও শুচিতায় তাঁহাদের সমকক্ষ কেহ নাই। বিস্ময়ে বিহ্বল হইয়া আমি তাঁহাদের মাহাত্ম্যের কথা ভাবিতেছি, এমন সময়ে দেখিলাম, সেই নিস্তরঙ্গ প্রভারাশির এক অংশ জমাট হইয়া একটি দেবশিশুর আকার ধারণ করিল। অতঃপর সেই শিশু সপ্তঋষির একজনের গলায় তাহার সুন্দর বাহু দুইটি জড়াইয়া অমৃত-নিস্যন্দী কলকণ্ঠে তাঁহার ধ্যানভঙ্গ করিতে চাহিল; তাহার মোহন স্পর্শে ঋষির নিস্পন্দভাব ঘুচিল, তিনি অর্দ্ধনিমীলিত নেত্রে সেই শিশুর অপূর্ব্ব মুখকান্তি নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন। ঋষির সেই ভাববিভোর দৃষ্টি দেখিয়া মনে হইল, ঐ শিশুই যেন তাঁহার বক্ষের মণি। তখন শিশুও পরম আহ্লাদে তাঁহাকে বলিল—“আমি যাইতেছি, তুমিও আইস।” ঋষি বাক্যস্ফূর্ত্তি করিলেন না, কিন্তু তাঁহার সস্নেহদৃষ্টি সম্মতিজ্ঞাপন করিল, এবং শিশুর পানে চাহিয়া থাকিতেই তিনি পুনঃ সমাধিমগ্ন হইলেন। আমি সবিস্ময়ে দেখিলাম তাঁহার অঙ্গ হইতে একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হইয়া আলোকশিখারূপে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হইতেছে। নরেনকে দেখিবামাত্র আমি তাহাকে সেই ঋষি বলিয়া চিনিয়াছিলাম।