বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৬
বিবিধ কথা

–শাশ্বতকে দেখিলাম ; অতীতকে বর্তমানে, এবং বর্তমানকে বহুদূরের অতীতের মধ্যে খুঁজিয়া পাইলাম ; কোমলের মধ্যে কঠোর, এবং ভীষণের মধ্যে মধুরকে দেখিলাম—এক কথায়, জীবন ও জগৎকে নূতন করিয়া আবিষ্কার করিলাম ; আমরা যেন এক নূতন অনুভূতির নূতন ইন্দ্রিয় লাভ করিলাম। এই যুগের রবীন্দ্রনাখ ষে নূতন ভাবধারার প্রবর্ত্তন করিলেন, তাহারই ফলে, বঙ্কিম-যুগের বাংলা সাহিত্য পূর্ণ-যৌবনে পদার্পণ করিল, এবং বিংশ-শতাব্দীর প্রথম পাদে এ সাহিত্যের অভাবনীয় শ্ৰীবৃদ্ধি হইল। এই নবপ্রবর্ত্তিত সাহিত্য-সাধনারই একটি সুপরিপক্ক ফল—শরৎচন্দ্রের উপন্যাস ; বস্তুত, পূর্ব্বে রবীন্দ্রনাথের উদয় না হইলে শরৎচন্দ্রের উদয় সম্ভব হইত কিনা সন্দেহ ।

 কিন্তু যাহা বলিতেছিলাম। রবীন্দ্রনাথের সেই কাব্য-সাধনা একটি নির্দিষ্ট কালে আসিয়া সমাপ্ত হইয়াছে ; ইহার কারণ, জগৎ ও জীবনকে সে ভাবে দেখা তাঁহার শেষ হইয়াছে। জীবনের এই বাহিরের রূপ তাঁহাকে বেশি দিন মুগ্ধ করিতে পারে নাই, সম্ভবত কখনও সম্পূর্ণ অভিভূত করে নাই। তাঁহার কবিজীবনের যে পূৰ্ব্বাৰ্দ্ধ ভাগের কথা বলিয়াছি, তাহাতেও বার বার কবির প্রাণে ক্লান্তি ও অবসাদ আসিয়াছে —রূপের মায়াজাল ভেদ করিয়া অরূপ-রহস্যের প্রতি তাঁহার প্রাণগত আকর্ষণের আভাস এ কালের রচনাতেও আছে। তাঁহার চক্ষে রূপ ক্রমাগত রূপক হইয়া উঠে—পার্থিব বস্তুপুঞ্জের অপার্থিব ছায়া তাঁহাকে বিহ্বল করে । কবির যৌবন জীবনের রসরূপকে অস্বীকার করিতে দেয় নাই বটে, কিন্তু সেই রসাস্বাদন-কালেও তিনি নিজকে বিশ্বাস করিতে পারেন নাই—এ কাজ যেন তাঁহার নয়, কোন লীলাময়ের লীলা–সহচররূপেই যেন তিনি এই রূপজগতের নিকটে আত্মনিবেদন