পাতা:বিবিধ সমালোচন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়).pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২০
বিবিধ সমালোচন।

ধনুর্দ্ধরাগ্রগণ্য, সর্বধর্ম্মার্থবেত্তা এবং ভয়ার্ত্তের ত্রাতা; ইহাঁর অসামান্য রূপলাবণ্য ত্রিলোকে প্রথিত আছে। অন্যান্য ভ্রাতৃবর্গ সততই এই প্রাণপ্রিয় অর্জ্জুনের রক্ষণাবেক্ষণ করিয়া থাকেন। এই মহাবীরের নাম নকুল; ইনি আমার পতি। ইনি খড়্গযুদ্ধে অদ্বিতীয়; আজি দৈত্যসৈন্য মধ্যবর্ত্তী দেবরাজ ইন্দ্রের ন্যায় রণস্থলে ইহাঁর অদ্ভুত কর্ম্ম সমুদায় প্রত্যক্ষ করিবে। ইনি মহাবল পরাক্রান্ত, মতিমান্ ও মনস্বী এবং ধর্ম্মানুষ্ঠান দ্বারা ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে নিরন্তর সন্তুষ্ট করিয়া থাকেন। আর যাঁহাকে সূর্য্যসম তেজঃসম্পন্ন দেখিতেছ; উনি আমার পতি, সর্ব্বকনিষ্ঠ সহদেব, উহাঁর তুল্য বুদ্ধিমান্ ও বক্তা আর নাই। উনি অনায়াসে প্রাণত্যাগ বা অগ্নিপ্রবেশ করিতে পারেন; তথাপি অধর্ম্ম ব্যবহারে কদাচ প্রবৃত্ত হন না এবং কিছুতেই অপ্রিয় সহ্য করিতে পারেন না। উনি আর্য্যা কুন্তীর প্রাণপ্রিয় পুত্র এবং ক্ষত্রিয়ধর্ম্মে একান্ত নিরত।

 যেমন অর্ণবমধ্যে রত্নপরিপূর্ণ নৌকা মকরপৃষ্ঠে আহত হইলে চূর্ণ ও বিকীর্ণ হইয়া যায়; এক্ষণে আমি সৈন্যগণমধ্যে তদ্রূপ বিক্ষোভিত ও অসহায় হইয়াছি। তুমি মোহাবেশপরবশ হইয়া যাঁহাদিগকে এইরূপ অবমাননা করিতেছ; সেই পাণ্ডবেরা তোমারে অবিলম্বে ইহার সমুচিত প্রতিফল প্রদান করিবেন কিন্তু অদ্য যদি তুমি ইঁহাদিগের নিকট পরিত্রান প্রাপ্ত হও; তাহা হইলে তোমার পুনর্জ্জন্ম লাভ হইবে; সন্দেহ নাই।[১]



  1. এই প্রবন্ধে যাহা মহাভারত হইতে উদ্ধৃত করা গিয়াছে তাহা কালীপ্রসন্ন সিংহের মহাভারত হইতে।