পাতা:বিবিধ সমালোচন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়).pdf/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৮
বিবিধ সমালোচন।

শোণিত তাহাদের শরীরে অদ্যাপি বহিতেছে; বাঙ্গালি কখনই বানরের ন্যায় কেবল অনুকরণের জন্যই অনুকরণপ্রিয় হইতে পারে না। এ অনুকরণ স্বাভাবিক, এবং পরিণামে মঙ্গলপ্রদ হইতে পারে। যাঁহারা আমাদিগের কৃত ইংরেজের আহার ও পরিচ্ছদের অনুকরণ দেখিয়া রাগ করেন তাঁহারা ইংরেজকৃত ফরাশীদিগের আহার পরিচ্ছদের অনুকরণ দেখিয়া কি বলিবেন? এ বিষয়ে বাঙ্গালির অপেক্ষা ইংরেজেরা অল্পাংশে অনুকারী? আমরা অনুকরণ করি, জাতীয় প্রভুর;—ইংরেজেরা অনুকরণ করেন—কাহার?

 ইহা আমরা অবশ্য স্বীকার করি, যে বাঙ্গালি যে পরিমাণে অনুকরণে প্রবৃত্ত, ততটা বাঞ্ছনীয় না হইতে পারে, বাঙ্গালির মধ্যে প্রতিভাশূন্য অনুকারীরই বাহুল্য; এবং তাঁহাদিগকে প্রায় গুণভাগের অনুকরণে প্রবৃত্ত না হইয়া দোষভাগের অনুকরণেই প্রবৃত্ত দেখা যায়। এইটি মহা দুঃখ। বাঙ্গালি গুণের অনুকরণে তত পটু নহে; দোষের অনুকরণে ভূমণ্ডলে অদ্বিতীয়। এই জন্যই আমরা বাঙ্গালির অনুকরণ প্রবৃত্তিকে গালি পাড়ি, এবং এই জন্যই রাজনারায়ণ বাবু যাহা২ বলিয়াছেন, তাহার অনেক গুলিকে যথার্থ বলিয়া স্বীকার করিতেছি।

 যে খানে অনুকারী প্রতিভাশালী সে খানেও অনুকরণের দুইটি মহৎ দোষ আছে। একটি বৈচিত্রের বিঘ্ন। এ সংসারে একটি প্রধান সুখ, বৈচিত্র ঘটিত। জগতীতলস্থ সর্ব্ব পদার্থ যদি এক বর্ণের হইত তবে জগৎ কি এত সুখদৃশ্য হইত? সকল শব্দ যদি এক প্রকার হইত—মনে কর কোকিলের স্বরের ন্যায় রব ভিন্ন পৃথিবীতে অন্য কোন প্রকার শব্দ না থাকিত, তবে কি শব্দ সকলের কর্ণজ্বালাকর হইত না। আমরা সেরূপ স্বভাব পাইলে, না হইতে পারিত। কিন্তু এক্ষণে আমরা যে প্রকৃতি