পাতা:বিবিধ সমালোচন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়).pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩০
বিবিধ সমালোচন।

হইতে পারে না। এক শ্রেণীর চরিজের লোকের দ্বারা, বহু প্রকারের কার্য্য সাধিত হইতে পারে না। অতএব সংসারে চরিত্র বৈচিত্র, কার্য্য বৈচিত্র, এবং প্রবৃত্তির বৈচিত্র প্রয়োজন। তদ্ব্যতীত সমাজের সকল বিষয়ে মঙ্গল নাই। অনুকরণ প্রবৃত্তিতে ইহাই ঘটে, যে, অনুকারীর চরিত্র, তাহার প্রবৃত্তি, এবং তাহার কার্য্য, অনুকরণীয়ের ন্যায় হয়, পথান্তরে গমন করিতে পারে না। যখন সমাজস্থ সকলেই বা অধিকাংশ লোক, বা কার্য্যক্ষম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগণ, একই আদর্শের অনুকারী হয়েন, তখন এই বৈচিত্র হানি অতি গুরুতর হইয়া উঠে। মনুষ্য চরিত্রের সর্ব্বাঙ্গীণ স্ফূর্ত্তি ঘঠে না; সর্ব্বপ্রকারের মনোবৃত্তি সকলের মধ্যে, যথোচিত সামঞ্জস্য থাকে না, সর্ব্বপ্রকারের কার্য্য সম্পাদিত হয় না, মনুষ্যের কপালে সকল প্রকার সুখ ঘটে না—মনুষ্যত্ব অসম্পূর্ণ থাকে, সমাজ অসম্পূর্ণ থাকে, মনুষ্যজীবন অসম্পূর্ণ থাকে।

 আমরা যে কয়টি কথা বলিয়াছি, তাহাতে নিম্নলিখিত তত্ত্ব সকলের উপলব্ধি হইতে পারে—

 ১। সামাজিক সভ্যতার আদি দুই প্রকার; কোন২ সমাজ স্বতঃ সভ্য হয়, কোন২ সমাজ অন্যত্র হইতে শিক্ষা লাভ করে। প্রথমোক্ত সভ্যতালাভ বহুকাল সাপেক্ষ; দ্বিতীয়োক্ত আশু সম্পন্ন হয়।

 ২। যখন কোন অপেক্ষাকৃত অসভ্য জাতি, অধিকতর সভ্যজাতির সংস্পর্শ লাভ করে, তখন দ্বিতীয় পথে সভ্যতা অতি দ্রুতগতিতে আসিতে থাকে। সেস্থলে সামাজিক গতি এইরূপ হয়, যে অপেক্ষাকৃত অসভ্য সমাজ সভ্যতর সমাজের সর্ব্বাঙ্গীন অনুকরণে প্রবৃত্ত হয়। ইহাই স্বাভাবিক নিয়ম।