পাতা:বিবিধ সমালোচন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়).pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
বিবিধ সমালোচন।

পদবাসী প্রজা, ও দেবাসুর এবং ইতর জীব স্থাবর জঙ্গম সকলে ঋষিপ্রভাববলে সমাগত হইয়া, লক্ষ্মণ কর্ত্তৃক যথা স্থানে সন্নিবেশিত হইলেন। পরে অভিনয়ারম্ভ হইল। রাম ও লবকুশ দ্রষ্টৃ বর্গ মধ্যে ছিলেন।

 সীতা বিসর্জ্জন বৃত্তান্তই এই অদ্ভুত নাটকের প্রথমাংশ। সীতা লক্ষ্মণ কর্ত্তৃক পরিত্যক্ত হইলে, তাঁহার কাতরতা, গঙ্গাপ্রবাহে দেহসমর্পণ, তন্মধ্যে যমলসন্তান প্রসব, গঙ্গা এবং পৃথিবী কর্ত্তৃক তাঁহার ও শিশুদিগের রক্ষা ও তৎসঙ্গে সীতার প্রস্থান ইত্যাদি অভিনীত হইল। দেখিয়া রাম মুর্চ্ছিত হইলেন। তখন লক্ষ্মণ উচ্চৈঃস্বরে বাল্মীকিকে লক্ষ্য করিয়া বলিতে লাগিলেন, “ভগবন! রক্ষা করুন! আপনার কাব্যের কি মর্ম্ম?” নটদিগকে বলিলেন, “তোমরা অভিনয় বন্ধ কর।”

 তখন সহসা দেবর্ষি কর্ত্তৃক অন্তরীক্ষ ব্যপ্ত হইল। গঙ্গার বারিরাশি মথিত হইল। ভাগীরথী এবং পৃথিবীর সহিত জল মধ্য হইতে উঠিলেন—কে? স্বয়ং সীতা। দেখিয়া লক্ষণ বিস্মিত এবং আহ্লাদিত হইয়া রামকে ডাকিলেন, “দেখুন! দেখুন!” কিন্তু রাম তখনও অচেতন। তখন সীহা অরুন্ধতী কর্ত্তৃক আদিষ্টা হইয়া রামকে স্পর্শ করিলেন। বললেন, “উঠ আর্য্য পুত্ত্র!”

 রাম চেতনা প্রাপ্ত হইলেন। পরে যাহা ঘটিল, বলা বাহুল্য। সেই সর্ব্বলোক সমারোহ সমক্ষে সীতার সতীত্ব দেবগণকর্ত্তৃক স্বীকৃত হইল। দেববাক্যে প্রজাগণ বুঝিল। সীতা লবকুশকেও পাইলেন। রামও তাঁহাদিগকে পুত্ত্র বলিয়া চিনিলেন। পরে সপুত্ত্রা ভার্য্যা গৃহে লইয়া গিয়া সুখে রাজ্য করিতে লাগিলেন।

 নাটকের ভিতর এই নাটকখানি যিনি অভিনীত দেখিবেন বা পাঠ করিবেন, তিনিই যে অশ্রুপাত করিবেন, তদ্বিষয়ে