বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৮২

এই কথা বলিলেন, “সকলই আমার কপালের দোষ। মধুতে এমন হইবে, তাহা কে জানে? দেখি দেখি, আমিও একটু খাইয়া দেখি।”

 হাসান সেই অবস্থাতেই নিষেধ করিয়া বলিতে লাগিলেন, “জাএদ, আমার কথা রাখ। ও মধু তুমি খাইও না। আমার মাথা খাও, ও মধু মুখে দিও না, ছুঁইও না। জাএদা! ও মধু নয়, কখনই ও মধু নয়! তুমি—খোদার দোহাই, ও মধু তুমি ছুঁইও না। আমি যে যাতনা ভোগ করিতেছি তাহা আমিই জানি। জাএদা, ঈশ্বরের নাম কর।”

 পত্নীকে এই কথা বলিয়াই হাসান ঈশ্বরের নাম করিতে লাগিলেন। কাহাকেও সংবাদ দিলেন না। জাএদার ঘরেই ঈশ্বরের প্রতি নির্ভর করিয়া রহিলেন। পবিত্র হৃদয়ে পবিত্র মুখেই দয়াময়ের পবিত্র নাম পুনঃ পুনঃ উচ্চারণ করিতে লাগিলেন। বিয়ের বিষম যাতনা নামের গুণে কতক পরিমাণে অল্প বোধ হইতে লাগিল। জাএদা সমস্ত রাত্রি জাগিয়া সেবা শুশ্রূষা করিলেন। প্রভাতী উপাসনার সময়ে হাসান অতি কটে জাএদার গৃহ হইতে বহির্গত হইয়া প্রভু মোহাম্মদের সমাধি-মন্দিরে গমন করিলেন। মন্দিরের সম্মুখস্থিত প্রাঙ্গণে উপবেশন করিয়া বিনীত ভাবে ঈশ্বরের নিকট সকাতরে প্রার্থনা করিতে লাগিলেন।

 যাঁহার কৃপাবলে অনন্ত জগৎ সৃষ্ট হইয়াছে, পর্ব্বত সাগরে মিশিয়াছে, বিজন বন নগরে পরিণত হইয়াছে, জনপূর্ণ মহানগরী নিবিড় অরণ্য হইয়া যাইতেছে, সেই সর্ব্বেশ্বরের অসাধ্য কি আছে! প্রভু মোহাম্মদের সমাধিমন্দিরের পবিত্রতা গুণে, ঈশ্বরের মহিমায় হাসান অরোগ্য লাভ করিলেন। কিন্তু এই প্রথম বিষপান হইতে মৃত্যু পর্যন্ত (চল্লিশ দিন) প্রায়ই কোন না কোন প্রকারে শরীরের গ্লানি ছিল। এ কথা (প্রথম বিষপান ও আরোগ্য লাভ) অতি গোপনে রাখিলেন। কাহারও নিকট প্রকাশ করিলেন না।

 প্রণয়ী, বিশ্বাসী ব্যক্তি যদি শত্রু হইয়া দাঁড়ায়, তবে তাহার হস্ত হইতে রক্ষা পাওয়া নিতান্ত কঠিন। চিরশত্রুর হস্ত হইতে অনেকেই রক্ষা পাইতে পারে, কিন্তু মিত্র যদি শত্রু হয়, তাহার হস্ত হইতে রক্ষা পাওয়ার আশা