পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১১৬

আহ্লাদে প্রবৃত্ত হউক। অর্থের অনটন হইলে, তজ্জন্য রাজভাণ্ডার অবারিতভাবে খোলা রহিল। সপ্তাহকাল রাজকার্য্য বন্ধ থাকিবে—দিবারাত্র কেবল আনন্দস্রোত বহিবে। যে ব্যক্তি হাসানের মৃত্যুসংবাদে দুঃখিত হইবে, কিংবা শোকাশ্রু বিনির্গত করিবে, কিংবা কোন প্রকার শোকচিহ্ন অঙ্গে ধারণ করিবে, তাহার গর্দ্দান কাটা যাইবে। যদি প্রকাশ পায় যে, এই সপ্তাহকাল মধ্যে কেহ কোন কারণে দুঃখের সহিত এক বিন্দু চক্ষের জল ফেলিয়াছে, তাহার শরীর হইতে সহস্রাধিক শোণিতবিন্দু বহির্গত করা হইবে।” অনেকেই মহাহর্ষে রাজাজ্ঞা প্রতিপালন করিতেছে; কেহ কেহ প্রাণের ভয়ে আমোদে মাতিয়াছে।

 সুসজ্জিতা এবং প্রহরিবেষ্টিতা হইয়া মায়মুনার সহিত জাএদা দামেস্ক নগরে উপস্থিত হইলেন। জাএদার আগমন-সংবাদ প্রাপ্ত হইয়া মনে মনে কি অনুধ্যানপূর্ব্বক এজিদ বলিলেন, “আজ আমার শরীর কিছু অসুস্থ। জাএদা ও মায়মুনাকে বিশেষ অভ্যর্থনার সহিত আমার উদ্যান প্রমোদভবনে স্থান দান কর। যথাযোগ্য আদরে তাহাদিগকে গ্রহণ কর। কোন বিষয়ে যেন অমর্য্যাদা কিংবা কোন ত্রুটি না হয়। আগামী কল্য প্রথমেই প্রকাশ্য দরবারে তাঁহাদের সহিত আমার দেখা হইবে। পরে অন্য কথা।”

 এইরূপ উপদেশ দিয়া রাজা এজিদ তদর্থে উপযুক্ত লোক নিযুক্ত করিলেন। এজিদের আজ্ঞাক্রমে, তাঁহার উপদেশমতে সমুদয় কার্য্য সুসম্পন্ন হইল। জাএদা ও মায়মুনা যথাযোগ্য সমাদরে প্রমোদভবনে স্থান পাইলেন। পরিচারক, পরিচারিকা, রক্ষক, প্রহরী—সকলই নিয়োজিত হইল। দেখিতে দেখিতে সূর্য্যদেব অস্তাচলে গমন করিলেন। নিশা যে কি জিনিস, আর ইহার ক্ষমতা যে কি—তাহা, বোধ হয়, আজ পর্য্যন্ত অনেকেই বুঝিতে পারেন নাই। সমস্ত দিন মহা দুঃখে কাটাইয়া কুহকিনী নিশার আগমনে নিদ্রায় অভিভূত হইলে সেই দুঃখের কথা কাহার মনে থাকে? সূর্য্য উদয় হইলে নিশ্চয়ই প্রাণবিয়োগ হইবে, একথা জানিয়াও যদি কেহ রাত্রে নিদ্রাভিভূত হয়, তাহা হইলে তখন প্রভাতের ভাবী ঘটনার কথা কি সেই দণ্ডপ্রাপ্ত অভাগার মনে পড়ে? দিবসে কাহারও সন্তান বিয়োগ হইয়াছে! কুহকিনী নিশা আসিয়া চতুর্দ্দিক অন্ধকার করিল, ক্রমে জগৎ নিস্তব্ধ করিল, সকলের অজ্ঞাতসারে নিদ্রাকে