বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৪০

গমন করা যুক্তিসঙ্গত বিবেচনা করেন নাই। লোকমুখে জেয়াদের বদান্যতা, বিপদ-সময়ে সাহায্য এবং অকাতরে রাজ্য পর্য্যন্ত দানের বিষয় শুনিয়া তিনি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়া কৃতজ্ঞতার সহিত উপাসনা করিলেন। কিন্তু জেয়াদপ্রেরিত নিশ্চিত সংবাদ না পাইয়া অন্য কাহাকেও তিনি কিছু বলিলেন না।

 মারওয়ান আজ মদিনা আক্রমণ করিবে, রওজা আক্রমণ করিবে, হোসেনের প্রাণ হনন করিবে,—সর্ব্বসাধারণের মুখে এই সকল কথার আন্দোলন হইতেছিল! মদিনাবাসীরা সকলেই হোসেনের পক্ষ হইয়া এজিদের সৈন্যের সহিত যথাসাধ্য যুদ্ধ করিবে, প্রাণ থাকিতে হোসেনের পরিজনদিগকে বন্দী করিয়া দামেস্ক লইয়া যাইতে দিবে না, এ কথাও রাষ্ট্র হইয়াছে। ‘আজ যুদ্ধ হয়’, কি ‘কাল যুদ্ধ হয়’, কেবল এই কথারই তর্ক-বিতর্ক। এজিদের সৈন্যগণ মদিনা আক্রমণ না করিলেও নিজেরা যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইবে কি না, এই বিষয় লইয়াই—এই চিন্তাতেই এমাম-বংশের চিরহিতৈষী মদিনাবাসীরা সকলেই মহা ব্যতিব্যস্ত। দিবারাত্র কাহারও যেন আর আহার-নিদ্রা নাই।

 কয়েক দিন যায়। শেষে সাব্যস্ত হইল যে, শত্রুগণ নগরের প্রান্তভাগে প্রান্তরের শেষ সীমায় শিবির নির্ম্মাণ করিয়া যে প্রকার শান্তভাবে রহিয়াছে, তাহাতে আশু বিরোধের সম্ভাবনা কি? কোন বিষয়ে অনৈক্য, কোন কার্য্যে বাধা দান কিংবা কোন কথার প্রসঙ্গে অযথা উত্তর না করিলে, কি প্রকারে বিবাদে প্রবৃত্ত হওয়া যায়? এই বিবেচনা করিয়া সকলেই যুদ্ধের অপেক্ষায় বিবাদের সূচনায় প্রতীক্ষা করিয়া রহিয়াছেন। এমন সময় একদিন কুফা নগরের কাসেদ মদিনায় দেখা দিল। মদিনাবাসীরা জেয়াদের বদান্যতার বিষয় পূর্ব্বেই শুনিয়াছিলেন। নিশ্চিত সংবাদ না পাইয়া অনেকে সন্দেহ করিতেছিলেন, আজ সে সন্দেহ দূর হইল। এক মুখে বলিতে শত শত মুখে জিজ্ঞাসিত হইল, “কুফার সংবাদ কি?”

 কাসেদ উত্তর করিল, “কুফাধিপতি মাননীয় আবদুল্লাহ্ জেয়াদ তাঁহার সিংহাসন, রাজ্য, ধন, সৈন্যসামন্ত সমস্তই হজরত এমাম হোসেনের নামে উৎসর্গ করিয়াছেন। তিনি এক্ষণে রাজকার্য্য হইতে অবসর গ্রহণ করিয়াছেন। এমাম হোসেন কুফা-সিংহাসনে উপবেশন না করা পর্য্যন্ত প্রধান উজীরের হস্তে