পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮১
মহরম পর্ব্ব—ত্রয়োবিংশ প্রবাহ

শিখেছিস? তুই আমার হুকুম মান্‌বি কিনা তাহাই বল্? তুই বেটা ভারি অবাধ্য!”

 “আপনি যাহাই বলুন, আমি মানুষ খুন করিতে পারিব না! আর এই দুইটি বালককে আমি রক্ষা করিবই। আমি এতক্ষণ কিছুই বলি নাই। দেখি, আপনি পাপের কোন্ সীমায় গিয়া উপস্থিত হন! জানিবেন—পিতা বলিতে ঘৃণা বোধ হইতেছে—জানিবেন, দস্যু মহাশয়! জানিবেন, লোভীর লোভ পূর্ণ হয় না। ঈশ্বর তাহার মনের আশা পূর্ণ করেন না। এই দেখুন তাহার দৃষ্টান্ত।”

 পরে সে বালকদ্বয়ের প্রতি চাহিয়া বলিল,—“এস ভাই, তোমরা এস! আমি তোমাদিগকে এখনই মদিনায় লইয়া যাইতেছি।”

 বালকদ্বয় মদিনার নাম শুনিয়াই যেন প্রাণের ভয় ভুলিয়া গেলেন। হারেসের পালিত পুত্র হস্ত বাড়াইয়া বালকদ্বয়ের হস্ত ধরিয়া ক্রোড়ের দিকে টানিয়া আনিতেই হারেস ক্রোধে এক প্রকার জ্ঞানহারা হইয়া বিকম্পিত কণ্ঠে বলিলেন,—“ওরে নিমকহারাম! আমার হাত থেকে বালকদ্বয়কে তুই কাড়িয়া লইবি? তোর এত বড় ক্ষমতা? এত বড় মাথা? তোকেই আগে শিক্ষা দিই।” পালিত পুত্রের দক্ষিণ হস্ত মোস্‌লেম-পুত্রদ্বয়ের দিকে প্রসারিত। বালকদ্বয়েরও ঐ প্রসারিত হস্ত ধরিতে একটু মাথা নোওয়াইয়া অগ্রসর হইবার চেষ্টা! এই সময়ে হারেসের তরবারি পালিত পুত্রের গ্রীবা-লক্ষ্যে উত্তোলিত হইল। চক্ষের পলক পড়িতেও অবসর হইল না। হারেসের আঘাতে পালিত পুত্রের শির ফোরাতকুলে বালুকা-মিশ্রিত ভূমিতে গড়াইয়া পড়িল। হারেসের রক্তরঞ্জিত তরবারি ঝন্‌ ঝন্ শব্দে কাঁপিয়া উঠিল। গৃহিণী পালিত পুত্রের অবস্থা দেখিয়া আর ক্রন্দন করিলেন না; স্ত্রী-স্বভাব বশতঃ অস্থির হইয়া চতুর্দ্দিক অন্ধকারও দেখিলেন না। তিনি আপন গর্ভজাত পুত্রের প্রতি আদেশ করিলেন,—“বাছা! এই ত সময়, তোমার প্রতিজ্ঞা পূরণ কর। বালক দুইটিকে রক্ষা কর!” মাতৃ-আজ্ঞা প্রাপ্তিমাত্র তিনি পিতৃহীন বালকদ্বয়কে রাক্ষস হারেসের হস্ত হইতে বলপূর্ব্বক কাড়িয়া লইতে এক লক্ষে বালকদ্বয়ের নিকটে গিয়া পড়িলেন। হারেস পালিত পুত্রের শির দেহবিচ্ছিন্ন করিয়া