বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৭
মহরম পর্ব্ব—ত্রয়োবিংশ প্রবাহ

 ঘাতক, প্রহরী, কার্য্যকারক তখনই রাজাদেশ মত কার্য্য করিতে প্রবৃত্ত হইল। তাহারা মোস্‌লেম-পুত্রদ্বয়ের খণ্ডিত শির মহামুল্য বস্ত্রে আবরিত করিয়া হারেস শিরে চাপাইয়া ফোরাত-কূলে লইয়া চলিল। ফোরাত-কূলে যাইয়া তাহা দেখিল, রক্তে আর বালিতে জমাট বাঁধিয়া একটি স্থান চিহ্নিত হইয়া রহিয়াছে। আরও এক আশ্চর্য্য ঘটনা। তাহারা দেখিল যে, মোসলেম-পুত্রদ্বয়ের শিরশূন্য ঘুগল দেহ গলাগলি করিয়া জড়াইয়া জলে ভাসিতেছে। কি আশ্চর্য্য! স্রোতের জলে যে মৃতদেহ ভাসাইয়া দেওয়া হইয়াছিল, স্রোতের বিপরীত দিকে তাহা টানিয়া আনিল কে? এই আশ্চর্য্য সংযোগ করিল কে?

 এই অত্যাশ্চর্য্য ঘটনা দেখিয়া রাজকীয় কার্য্যকারকের মনেও একটি কথা হঠাৎ উদয় হইল। তিনি পাত্রস্থ দুইটি মস্তক ফোরাত-জলের নিকটে ধরিতেই জড়িত যুগল দেহ ভাসিতে ভাসিতে আসিয়া আপন আপন মস্তকে সংলগ্ন হইল। রাজকর্ম্মচারী মৃতদেহ দুইটি উঠাইয়া পৃথক করিতে বহু চেষ্টা করিলেন, কিছুতেই পৃথক করিতে পারিলেন না; সে অপূর্ব্ব ভ্রাতৃস্নেহ-বন্ধন বহু যত্নেও ভিন্ন করিতে পারিলেন না, শবদেহের সে আশ্চর্য্য ভ্রাতৃমায়া-বন্ধন ছাড়াইয়া পৃথক করিতে সক্ষম হইলেন না। বাধ্য হইয়া তিনি দুই ভ্রাতার দেহ একত্রে স্নান করাইয়া একত্রে কাফন করিয়া একযোগে দাফন করিলেন।

 তাহার পর হারেসের প্রতি রাজাজ্ঞা যাহা ছিল, তাহা সম্পাদন করিতে যাইতেই হারেস বলিল, “আমার উচিত শাস্তি হইল। অতিরিক্ত লোভের অতিরিক্ত ফলও ভোগ করিলাম। হা-পুত্র—হা-স্ত্রী—হা-লোভ।”

 হারেসের খণ্ডিত দেহ বধ্যভূমিতে পড়িয়া রহিল।