বিষাদ-সিন্ন জয়নাল চক্ষু পাকাইয়া বলিলেন, “কেন পারিব না?
“কেন-র কোন উত্তর নাই,—রাজার আজ্ঞা।”
“ধর্ম্মচর্চায় বিধর্ম্ম্মী রাজার আজ্ঞা কি? আমার ধর্ম্মকর্ম্ম আমি করিব, তাহতে তোমাদের কথা কি? আমি যত দিন মদিনায় সিংহাসনে না বসিব, তত দিন পিতার নামেই খোৎবা পাঠ করিব; এই ত রাজার আজ্ঞা। তুমি কোন্ রাজার কথা বলিতেছে?”
“তুমি নিতান্তই অবোধ, কিছুই বুঝিতেছ না। তোমার মা'র নিকট বলিলে, তিনি সকলই বুঝিতে পারিবেন।”
“আমি অবোধ না হইলে তোমাদের বন্দীখানায় কেন আসিব? আর কি কথা আছে বল। আমি মার নিকটে যাইতেছি।”
“যিনি দামেস্কের রাজা, তিনিই এক্ষণে মদিনার রাজা। মক্কা ও মদিনা একই রাজার রাজ্য হইয়াছে। এখন ভাব দেখি কাহার নামে খোৎবা পাঠ করা কর্ত্তব্য?”
“আমি ও-প্রকারের কথা বুঝিতে পারি না। যাহা বলিবার হয়, স্পষ্টভাবে বল।”
“তোমার কিছুমাত্র জ্ঞান নাই; কেবল থাকিবার মধ্যে আছে রাগ আর নিজের অহঙ্কার। বাদশাহ-নামদার এজিদের নামে খোৎবা পড়িতে হইবে।”
জয়নাল আবেদীন রোষে ও দুঃখে সজলনয়নে বলিতে লাগিলেন, “কাফেরের নামে আমি খোৎবা পড়িব? এজিদ কোন দেশের রাজা? আর সে কোন্ রাজার পুত্র?”
মারওয়ান অতি ব্যস্তে জয়নাল আবেদীনকে ধরিয়া সস্নেহে বলিতে লাগিল, “সাবধান! সাবধান!! ও কথা মুখে আনিও না। মুখে আনিলে নিশ্চয়ই তোমার মাথা-কাটা যাইবে।”
“আমি মাথা-কাটাতে ভয় করি না। তুমি আমার নিকট হইতে চলিয়া যাও-অমি খোৎবা পড়িতে যাইব না।” মারওয়ান মনে করিয়াছিল যে, জয়নালকে বলিরামাত্রই তিনি খোৎবা