পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬১
উদ্ধার পর্ব্ব—একবিংশ প্রবাহ

এই দৃঢ় বিশ্বাসেই—এজিদের এত আশা। অল্প সময় মধ্যেই পরস্পর দেখা সাক্ষাৎ হইল। এজিদ বিজয়-বাজনা বাজাইয়া বিজয়নিশান উড়াইয়া উপস্থিত হইলেন। মারওয়ানের অন্তরে আঘাত লাগিতে লাগিল, তাহার ম্লান মুখ আরও মলিন হইল।

 এজিদ অনুমানেই বুঝিলেন—অমঙ্গলের লক্ষণ! কি বলিয়া কি জিজ্ঞাসা করিবেন? কু-কথা কু-সংবাদ যতক্ষণ চাপা থাকে, ততক্ষণই মঙ্গল। মন্ত্রীবরের গলায় রত্নহার পরাইবার কথা বিপরীত চিন্তায় চাপা পড়িয়া গেল। বিজয়-বাজনা স্বভাবতঃই বন্ধ হইল। মারওয়ানের মুখে কি কথা অগ্রে বাহির হইবে শুনিতে এজিদের মহা আগ্রহ জন্মিল।

 মারওয়ান নতশিরে অভিবাদন করিয়া বিনম্রভাবে বলিল, “মহারাজ। আর অগ্রসর হইবেন না! শত্রুদল আগত।”

 “তোমাদের আকারে প্রকারেই অনেক বুঝিয়াছি। কিন্তু বারবার পশ্চাদ্দিকে সভয়ে কি দেখিতেছ? পশ্চাতে কি আছে?”

 মারওয়ান মনে মনে বলিল, “যাহা আপনার দেখিবার বাকী আছে।” প্রকাশ্যে বলিল “মহারাজ, আর কিছুই নহে—সেই চঁদ-তারা সংযুক্ত নিশানের অগ্রভাগ দেখিতেছি। বেশী বিলম্ব নাই। তাহারা যেভাবে আসিতেছে, তাহাতে কোনরূপ সাজসজ্জা করিয়া আত্মরক্ষার জন্য কোন নূতন উপায়, কি নগর-রক্ষার কোনরূপ সুবন্দোবস্ত করিবার আর সময় নাই। যাহা সংগ্রহ আছে তাহাই সম্বল—তাহার প্রতিই নির্ভর।”

 “হানিফা কি এতই নিকটবর্ত্তী?”

 “সে কথা মুখে আর কি বলিব? কান পাতিয়া শুনুন, কিসের শব্দ শুনা যায়।”

 “হাঁ, কিছু কিছু শুনিতেছি। কোন কোন সময়ে আকাশে যে মেঘগর্জ্জন শুনিতে পাওয়া যায়, বোধ হয়, সেই ঘনঘটা বিজলীর সহিত বহু দূরে খেলা করিতেছে।”

 “মহারাজ, ও ঘনঘটার শব্দ নহে, বিদ্যুতের আভাও নহে,—ও দামামা-নাকাড়ার গুড়গুড়ি, ডঙ্কায় কর্ণভেদী ধ্বনি আর অস্ত্রের চাকচিক্য।”