পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪০৮

বীর-হৃদয়ে ভয়! দুইজনে সমানভাবে একত্র যাইতে পারিলেই নির্ভয়,— এ কি কথা?”

 “মারওয়ান! আমরা যে কার্য্যে বাহির হইয়াছি, সে কার্য্যের কথা মনে আছে। কার্য্যগতিকে সাহস, রুচিগতিকে বল। এখানে তোমার মন্ত্রী নাই, আমারও বীরত্ব নাই। যেমন কার্য্য, তেমনই স্বভাব।

 উভয়ে হাস্যে রহস্যে একত্রে যাইতেছে। প্রজ্জ্বলিত দীপের প্রদীপ্ত আভায় শিবির-দ্বারে মানুষের গতিবিধি স্পষ্টভাবে দেখা যাইতেছে। গমনের বেগ তাহারা কিছু বর্দ্ধিত করিল, সঙ্গে সঙ্গে হাসি-রহস্য ও চলিতেছে। দুর্ভাগ্যক্রমে তাহাদের হাসি বেশীক্ষণ রহিল না। দৈবাৎ নিকটে একটি শব্দ তাহাদের কর্ণে প্রবেশ করিল। তাহারা দক্ষিণে, বামে দৃষ্টিপাত করিল—অন্ধকার! সম্মুখে-দীপালোক! তাহারা গমনে ক্ষান্ত হইল। আবার সেই হৃদ্‌কম্পনকারী শব্দ—ক্ষিপ্রহস্তে নিক্ষিপ্ত তীরের শন্ শন্ শব্দ। মারওয়ান অন্তরে জানিয়াছে—তীরের গতি, মুখে বলিতেছে—“ও কিসের শব্দ? অলীদ! ও কিসের শব্দ?” কি বিপদ, এই কথা কহিতে না কহিতেই তিনটি লৌহশর তাহাদের সম্মুখে আসিয়া পড়িল। এখন কি করিবে—অগ্রে পা ফেলিবে, কি পিছনে সরিবে, কি স্থিরভাবে একস্থানে দণ্ডায়মান থাকিবে— কিছুই তাহারা স্থির করিতে পারিল না। দক্ষিণ পার্শ্ব হইতে গভীর নাদে শব্দ: শত্রু হও, মিত্র হও—ফিরিয়া যাও,—রাত্রে এ শিবিরে প্রবেশ নিষেধ— রাত্রে আঘাত মহারাজের নিষিদ্ধ, তাহাতেই প্রাণ বাঁচাইতে পারিলে; নতুবা ঐ স্থানেই ইহকালের মত পড়িয়া থাকিতে হইত।”

 আর কোন কথা নাই। চতুর্দ্দিক নিঃশব্দ। কিছুক্ষণ পরে অলীদ বলিল, “মারওয়ান! এখন আর কথা কি? অঙ্গুলি পরিমাণ ভূমি আগে যাইতে আর কি সাহস হয়?”

 মারওয়ান মৃদুস্বরে বলিল, “ওহে চুপ কর। প্রহরীরা আমাদের নিকটেই আছে।”

 “নিকটে থাকিলে ত ধরিয়া ফেলিত।”

 “ধরিবার ত কোন কথা নাই—তবে উহারা বিশেষ সতর্কতার সহিত