বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৭৮

বোধ হয়, আমি ভালবাসা পাইলাম। জাএদাকে তিনি যে প্রকার বিষ-নয়নে দেখিতেন, জাএদা আমাকেও সেই প্রকার বিষ-নয়নে দেখিতে লাগিল। সুতরাং, শত্রুর শত্রু—মিত্র। ইহাতে আমি হাস্‌নেবানুর প্রিয় সপত্নী। সপত্নী—সম্পর্কে, কিন্তু স্নেহে আদরে ভালবাসায় প্রিয়তমা সহোদরা। জ্যেষ্ঠা ভগিনী কনিষ্ঠাকে যে যে প্রকারের সুমিষ্ট বচনে, উপদেশ-আজ্ঞায় সতর্ক করেন, হাসনেবানু আমাকেও সেই প্রকারে ভালবাসার সহিত নানা বিষয়ে সাবধান ও সতর্ক করিতেন। আমিও তাঁহাকে ভক্তির চক্ষে, দেখিয়াছি, এ পর্য্যন্তও দেখিতেছি। কোন সময়ে জাএদা বিবির সহিত চোখে মুখে নজর পড়িলেই সর্ব্বনাশ! সে তীব্র দৃষ্টির ভাব যেন এখনও আমার চক্ষের উপর আঁকা রহিয়াছে বলিয়া বোধ হয়। পারেন ত তিনি চক্ষের তেজে আমাকে দগ্ধ করিয়া ছাই করেন?—জীবন্ত গোরে পুঁতিতে পারিলেই যেন নিঃশ্বাস ফেলিয়া বাঁচেন!—এমনই রোষ, এমনই হিংসার তেজ যে, অমন সুন্দর মুখখানি, আমার মুখের উপর নজর পড়িতেই, যেন বিকৃত হইত।—কে যেন এক পেয়ালা বিষ সেই মুখের উপর ঢালিয়া দিত। কিছু দিন যায়। একদিন অতি প্রত্যুষে মেঘের গুড়্ গুড়্ শব্দের ন্যায় ডঙ্কা, কাড়া, নাকাড়াধ্বনি কানে আসিল। মনে আছে,—খুব মনে আছে: প্রভাত হইতে না হইতেই মদিনাবাসীরা ঈশ্বরের নাম করিয়া বীর-মদে মতিয়া উঠিল; দেখিতে দেখিতে যুবা বৃদ্ধ সকলের শরীরেই চর্ম্ম, বর্ম্ম, তীর, তরবারি শোভা পাইতে লাগিল। রূপের আভা, অস্ত্রের আভা-সজ্জিত আভায় সমুদিত দিনমণির অদ্বিতীয় উজ্জ্বলাভ সময়ে সময়ে যেন মলিন বোধ হইতে লাগিল।”

 “প্রভুও সজ্জিত হইলেন,—বীরসাজে সাজিলেন। সে সাজ আমার চক্ষে সেই-ই প্রথম,—এখনও যেন চক্ষের উপর ঘুরিতেছে। দেখিলাম প্রভুই সকলের নেতা। কিছুক্ষণের পরে দেখি বীর-প্রসবিনী মদিনার বীরাঙ্গনাগণও মুক্তকেশে অসি-হস্তে দলে দলে প্রভুর নিকটে আসিয়া যুদ্ধে যাইতে ব্যগ্রতা প্রকাশ করিলেন। কাহার সহিত যুদ্ধ?—কে সে লোক যে, কুলের কুলবধুরাও পর্য্যন্ত অসি-হস্তে সে মহাপাপীর বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হইয়াছে? শেষে শুনিলাম: এজিদের আগমন,—মদিনা আক্রমণের উপক্রম। ধন্য মদিনা!