বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৫১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৯২

আর্ত্তনাদে উদ্যানস্থ পক্ষীকুল বিকট কণ্ঠে ভয়ে ডাকিয়া উঠিল, বাসা ছাড়িয়া, শাখা ছাড়িয়া, দিগ্বিদিকে উড়িয়া বেড়াইতে আরম্ভ করিল। ভূকম্পনে তরুলতাসকল ভয়ে কাঁপিতে লাগিল। গাজী রহ্‌মান, মস্‌হাব কাক্কা, ওমর আলী, আক্কেল আলী প্রভৃতি উপস্থিত ঘটনা দেখিয়া নির্ব্বাকে হানিফার পশ্চাতে দণ্ডায়মান হিলেন। মোহাম্মদ হানিফার ভাব ভিন্ন— মুখাকৃতি বিকৃত অথচ হিংসায় পরিপূর্ণ। তাঁহার হৃদয় হিংসানলে দগ্ধীভূত। স্থির নেত্রে উর্দ্ধমুখ হইয়া তিনি দণ্ডায়মান। তরবারি-মুষ্টি তাঁহার দক্ষিণ হস্তে, তরবারির অগ্রভাগ তাঁহার বামস্কন্ধে স্থাপিত।

 আবার দৈববাণী হইল—“হানিফা! দুঃখ করিও না। এজিদ কাহারও বধ্য নহে। রোজ-কেয়ামত (শেষ দিন) পর্য্যন্ত এজিদ এই কূপে এই জ্বলন্ত হুতাশনে জ্বলিতে থাকিবে—পুড়িতে থাকিবে, অথচ প্রাণ বিয়োগ হইবে না।”

 মোহাম্মদ হানিফা চম্‌কিয়া উঠিলেন। তাঁহার তরবারির অগ্রভাগ স্কন্ধ হইতে মৃত্তিকা স্পর্শ করিল। অশ্ব-বল্গা বাম হস্তে ধরিয়া তিনি বলিতে লাগিলেন, “এজিদ আমার বধ্য নহে। আর কি করিব? ইচ্ছা করিলে এক তীব্র তীরে নরাধমের কলিজা পার করিতে পারিতাম; হৃদয়ের রক্তধারায় তরবারি দ্বারাই নারকীয় দেহ দুই খণ্ডে বিভক্ত হইত। তাহা করি নাই, চক্ষে চক্ষে সম্মুখে না যুঝিয়া, অস্ত্রের চাকচিক্য না দেখাইয়া কাহারও প্রাণ সংহার করি নাই। ইহজীবনে কাহারাও পৃষ্ঠে আঘাত করি নাই। এজিদ পৃষ্ঠ দেখাইল। আর অস্ত্রের আঘাত কি? জীবন্ত ধরিব, সকলের সম্মুখে ধরিয়া আনিব, একত্র এক সঙ্গে মনের আগুন নির্ব্বাণ করিব,—তাহা হইল না। মনের আশা মিটিল না! এত পরিশ্রম করিয়াও কৃতকার্য্য হইতে পারিলাম না! এক্ষণে কি করি! প্রিয় গাজী রহ্‌মান! ভাই মস্‌হাব! হানিফার মনের আগুন নিভিল না! আশা পূর্ণ হইল না! কি করি?”

 এই বলিয়া মোহাম্মদ হানিফা পুনরায় অশ্বে আরোহণ করিলেন,—চক্ষের পলকে উদ্যান হইতে বাহির হইলেন। গাজী রহ্‌মান মহা সঙ্কটকাল ভাবিয়া মস্‌হাব কাক্কা, ওমর আলী প্রভৃতিকে বলিলেন—“ভাবিয়াছিলাম, আজই