বাংলার গৌরব শ্রীযতীন্দ্র গুহ বা গোবরবাবু। সেখানেও যখন-তখন বসত গান-বাজনার আসর। আগে জমীরুদ্দীন খাঁ-সাহেব (ইনিও মস্তবড় গুণী এবং এঁর কথাও পরে বলব) ও শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র দে প্রভৃতির গান হ’ত, তারপর খাঁ-সাহেব বার করতেন তাঁর মোহনীয়া বীণা। একদিন গানের পর আরম্ভ হ’ল খাঁ-সাহেবের সাধের বীণার হাসিকান্নার অভিযান, সুর-তরঙ্গের মধ্যে ফুলের মত ভেসে ভেসে উঠতে লাগল নব-রসের সব রস। চিত্রার্পিতের মত ব’সে শুনতে শুনতে হঠাৎ দেখা গেল বেজে গিয়েছে রাত বারোটা। বাড়ীর কথা ভেবে খাঁ-সাহেবকে সেলাম ক’রে তাড়াতাড়ি উঠে পড়লুম—সঙ্গে সঙ্গে আচম্বিতে খাঁ-সাহেব বাজনা থামিয়ে তাঁর সুদীর্ঘ বিপুলবপু নিয়ে সামনের দিকে হুম্ড়ি খেয়ে প’ড়ে একখানা হাত বাড়িয়ে আমাকে ধ’রে ফেলে ব’লে উঠলেন, ‘কোথায় যাবেন বাবুজী? বাজনা শেষ না হ’লে এখান থেকে যেতে পারবেন না!’ বুঝলুম (বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষায় বুঝলুম), ফুলের যেমন গন্ধ বিলিয়ে সুখ, সত্যিকার কলাবিদ্ও তেমনি নিজের পরিপূর্ণতা না দেখিয়ে তৃপ্তি লাভ করেন না! বাধ্য হয়ে ব’সে পড়লুম, কারণ শিল্পীর মনে আঘাত দেওয়া পাপ। আবার বীণা তার বিচিত্র ভাষায় আলাপ করতে লাগল এবং সেই অপূর্ব আলাপ যখন বন্ধ হ’ল রাত কাবার হ'তে আর দেরি নেই তখন।
সর্বশেষে খাঁ-সাহেবের একটি মজার গল্প শুনিয়ে রাখি—গল্পটি শুনেছিলুম আমি বিখ্যাত সাহিত্যিক শ্রীপ্রেমাঙ্কুর আতর্থীর মুখে। তিনি তখন খাঁ-সাহেবের কাছে সেতার বাজনা শিখতে যেতেন।
খাঁ-সাহেব এক নূতন ও ভৌতিক বাসায় উঠে এসেছেন। সে বাসায় আমিও মাঝে মাঝে গিয়েছি, কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য অথবা সৌভাগ্য ক্রমে ভৌতিক কোন-কিছুর দ্বারাই আমি বিস্মিত বা
৬৩