বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 মধুসূদনের আহারের সময় শ্যামাসুন্দরী রোজই উপস্থিত থাকে। আজও ছিল। সদ্য স্নান করে এসেছে— তার অসামান্য কালো ঘন লম্বা চুল পিঠের উপর মেলে-দেওয়া তার উপর দিয়ে অমলশুভ্র শাড়িটি মাথার উপর টেনে-দেওয়া— ভিজে চুল থেকে মাথাঘষা মসলার মৃদু গন্ধ আসছে।

 দুধের বাটি থেকে মুখ না তুলে এক সময় আস্তে আস্তে বললে, “ঠাকুরপো, বউকে কি ডেকে দেব?”

 মধুসূদন কোনো কথা না বলে তার ভাজের মুখের দিকে গম্ভীরভাবে চাইলে। তার ভাজ শ্যামাসুন্দরী ভয়ে থতমত খেয়ে প্রশ্নটাকে ব্যাখ্যা করে বললে, “তোমার খাবার সময় কাছে বসলে হয় ভালো, তোমাকে একটু সেবা করতে—”

 মধুসূদনের মুখের ভাবের কোনো অর্থ বুঝতে না পেরে শ্যামাসুন্দরী বাক্য শেষ না করেই চুপ করে গেল। মধুসূদন আবার মাথা হেঁট করে আহারে লাগল।

 কিছুক্ষণ পরে থালা থেকে মুখ না তুলেই জিজ্ঞাসা করলে, “বড়োবউ এখন কোথায়?”

 শ্যামাসুন্দরী ব্যস্ত হয়ে বলে উঠল, “আমি দেখে আসছি।”

 মধুসূদন ভ্রূকুঞ্চিত করে আঙুল নেড়ে নিষেধ করলে। প্রশ্নের যে-উত্তর পাবার আশা আছে সেটা এর মুখে শুনলে সহ্য হবে না—অথচ মনের মধ্যে যথেষ্ট কৌতুহল। আহার-শেষে তেতলায় যখন তার শোবার ঘরে গেল, মনের কোণে একটা ক্ষীণ প্রত্যাশা ছিল। একবার ছাদ এল ঘুরে। পাশের নাবার ঘরে ঢুকে ক্ষণকালের জন্য স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার পরে বিছানায় শুয়ে গুড়গুড়িতে টান দিতে লাগল। নির্দিষ্ট পনেরো মিনিট যায়— বিশ মিনিট পার হয়ে যখন

১১০