সেদিন মধুসূদন ফিরে গিয়ে তুমুল একটা বিপ্লব বাধিয়েছিল তা বোঝা গেল।
নবীন যাই বলুক, কুমুই যে ওদের সংসারের সমস্ত ওলটপালট করে দিয়েছে মোতির মার তাতে সন্দেহ নেই, আর সেই অপরাধ সে সহজে ক্ষমা করতে চায় না। তার মত এই যে, এখনাে কুমুর সেখানে যাওয়া উচিত মাথা হেঁট করে, তার পরে যত লাঞ্ছনাই হােক সেটা মেনে নেওয়া চাই। গলা বেশ একটু কঠিন করেই জিজ্ঞাসা করলে, “তুমি কি শ্বশুরবাড়ি একেবারেই যাবে না ঠিক করেছ?”
কুমু তার উত্তরে শক্ত করেই বললে, “না, যাব না।”
মােতির মা জিজ্ঞাসা করলে, “তা হলে তােমার গতি কোথায়?”
কুমু বললে, “মস্ত এই পৃথিবী, এর মধ্যে কোনাে-এক জায়গায় আমারও একটুখানি ঠাঁই হতে পারবে। জীবনে অনেক যায় খসে, তবুও কিছু বাকি থাকে।”
কুমু বুঝতে পারছিল মোতির মার মন ওর কাছ থেকে অনেকখানি সরে এসেছে। নবীনকে জিজ্ঞাসা করলে, “ঠাকুরপো, তা হলে কী করবে এখন।”
“নদীর ধারে কিছু জমি আছে, তার থেকে মােটা ভাতও জুটবে, কিছু হাওয়া খাওয়াও চলবে।”
মােতির মা উষ্মার সঙ্গেই বললে, “ওগাে মশায়, না, সেজন্যে তােমাকে ভাবতে হবে না। ওই মির্জাপুরের অন্নজলে দাবি রাখি, সে কেউ কাড়তে পারবে না। আমরা তো এত বেশি সম্মানী লােক নই, বড়ঠাকুর তাড়া দিলেই অমনি বিবাগি হয়ে চলে যাব। তিনিই আবার আজ বাদে কাল ফিরিয়ে ডাকবেন, তখন ফিরেও আসব, ইতিমধ্যে সবুর সইবে, এই বলে রাখলুম।”