বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গেল ! ; : 's তৎপরেই একটী বশী। বশীর আঘাতে ব্রাহ্মণ ভূমিতে পতিত হইলেন, কিন্তু সে দাভেদ্য বাম ভিন্ন হইল না, মহাদেও পুনরায় উঠিলেন। সন্মুখে দেখিলেন, নিকোষিত অসিহন্তে একজন দীঘ মোগল যোদ্ধা,—তিনি চাঁদখাঁ! pf অদ্য সভাতে সেনাপতি সায়েস্তাখা চাঁদখাঁকে ভীর বলিয়াছেন। যুদ্ধব্যবসায়ে চাঁদখাঁর কেশ শুক্ল হইয়াছিল, এ অপবাদ কেহ তাঁহাকে কখনও দেয় নাই। মনে মন্মান্তিক বেদনা পাইয়াছিলেন, অন্যকে তাহা কি জানাইবেন, মনে মনে স্থির করিলেন, কাৰ্য্য দ্বারা এ অপবাদ দর করিব, নচেৎ এই যুদ্ধেই এই অকিঞ্চিৎকর প্রাণ ত্যাগ করিব। ব্রাহ্মণের আচরণ দেখিয়া তাঁহার সন্দেহ হইয়াছিল। তিনি শিবজীকে বিশেষ করিয়া জানিতেন। শিবজীর অসাধারণ ক্ষমতা, তাঁহার বহুসংখ্যক দগে", তাঁহার অপর্বে ও দ্রুতগামী অশ্বারোহী সেনা, তাঁহার হিন্দধমে আস্থা, হিন্দরাজ্যস্থাপনে অভিলাষ, হিন্দ-স্বাধীনতাস্থাপনে দঢ় প্রতিজ্ঞা, এসমস্ত চাঁদখাঁর অগোচর ছিল না । মোগলদিগের সহিত যুদ্ধপ্রারম্ভেই যে শিবজী পরাজয় স্বীকার ও সন্ধি যাদ্ধা করিবেন এরুপ সম্ভব নহে, তথাপি এ ব্রাহ্মণ শিবজীর নিদশনপত্র দেখাইয়াছে। এ ব্রাহ্মণ কে ? ইহার গুপ্ত অভিসন্ধিই বা কি ? ব্রাহ্মণের কথাগুলিতেও চাঁদখাঁর সন্দেহ জন্মিয়াছিল, মহারাষ্ট্ৰীয়দিগের নিন্দা শুনিয়া যখন ব্রাহ্মণের নয়ন প্রজবলিত হয় তাহাও তিনি দেখিয়াছিলেন। এ সমস্ত সন্দেহের কথা সায়েস্তাখাঁর নিকট বলেন নাই, সত্য বলিয়া কেন আবার তিরস্কার সহ্য করবেন ? কিন্তু মনে মনে স্থির করিলেন, এই ভণ্ড দতকে ধরিব। সেই অবধি দতের পশ্চাৎ পশ্চাৎ আসিতেছিলেন, পথে পথে, গলিতে গলিতে, অদশ্যভাবে অনুসরণ করিয়াছিলেন। মহেনত্তের জন্যও ব্রাহ্মণ চাঁদখাঁর নয়নবহিভূত হইতে পারেন নাই। সেনার সহিত ব্রাহ্মণের যে কথা হয় তাহা শুনিলেন। তীক্ষাবৃদ্ধি যোদ্ধা তখনই সমস্ত বঝিতে পারিলেন, এই দতকে বিনাশ করিয়া সেনাকে সেনাপতিসদনে লইয়া যাইয়া প্রতিপত্তি লাভের সঙ্কল্প করিলেন। মনে মনে ভাবিলেন,—সায়েস্তাখাঁ ! যাদ্ধব্যবসায়ে ব্যথা এ কেশ শতক করি নাই, আমি ভীরও নহি, দিল্লীশ্বরের বিরাদ্ধাচারীও নহি । অদ্য যে ষড়যন্ত্ৰটী ধরিয়া প্রকাশ করিয়া দিব, তাহার পর বোধ হয় এ প্রাচীন দাসের কথা তুমি অবহেলা করিবে না। কিন্তু আশা মায়াবিনী ! মহাদেওজী ভূমি হইতে উঠিতে না উঠিতে চাঁদখাঁ তীর ও বশ ব্যথা দেখিয়া লম্ফ দিয়া তাঁহার উপর আসিয়া পড়িলেন ও খড়গ দ্বারা সজোরে আঘাত করিলেন। খড়া বম্মে লাগিয়া সেবারও প্রতিহত হইল । “কুক্ষণে আমার অনুসরণ করিয়াছিলে,”—এই বলিয়া মহাদেওজী আপন আস্তিন গটাইয়া তীক্ষ ছুরিকা আকাশের দিকে উত্তোলন করিলেন। নিমেষমধ্যে বজ্রমটি চাঁদখাঁর বক্ষঃস্থলে অবতীর্ণ হইল, চাঁদখাঁর মৃতদেহ ধরাতলশায়ী হইল। ব্রাহ্মণ সক্ষম অধরোঠের উপর দন্ত স্থাপন করিয়াছিলেন, তাঁহার চক্ষ হইতে অগ্নি বাঁহগত হইতেছিল। ধীরে ধীরে সেই ছরিকা পনরায় লুকাইয়া বলিলেন,-সায়েস্তাখী! মহারাষ্ট্ৰীয়দিগের নিন্দা করার এই প্রথম ফল, ভবানীর কল্যাণে দ্বিতীয় ফল কল্য ফলিবে। যোদ্ধার কত্তব্য কায্যে যে সময়ে চাঁদখাঁ জীবনদান করিলেন, সেনাপতি সায়েস্তাখাঁ সে সময়ে বড় সখে নিদ্রা যাইতেছিলেন, শিবজীকে বশীকরণবিষয়ে সখে-স্বপ্ন দেখিতেছিলেন! মহারাষ্ট্ৰীয় সেনা এই সমস্ত ব্যাপারে বিস্মিত হইয়া বলিল,—প্রভু কি করিলেন ? কল৷ এ বিষয়ে গোল হইবে, আমাদের সমুদয় সঙ্কল্প ব্যথা হইবে। ব্রাহ্মণ। কিছুমাত্র ব্যথা হইবে না। আমি জানিয়াছি চাঁদখাঁ আদ্য সভায় অপমানিত হইয়াছেন, এখন কয়েকদিন সভায় না যাইলেও কেহ সন্দেহ করিবে না। এই মতদেহ ঐ গভীর কপে নিক্ষেপ কর, আর স্মরণ রাখিও, কল্য রজনী এক প্রহরকালে । f সেনা । রজনী এক প্রহরকালে। m d ...م ব্রাহ্মণ নিঃশব্দে পানানগর ত্যাগ করিলেন। তিন চারি স্থানে প্রহরিগণ তাঁহাকে ধাঁরল তিনি সায়েস্তাখাঁর স্বাক্ষরিত অনুমতিপন্ন দেখাইয়া নিরাপদে পনো হইতে বহিগত হইলেন। ১৬৪