বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

अशब्राष्ट्रो जीवन-टाझाङ তোরণ দাগ হইতে রাজগড় যাত্রাকালে সরযর শিবিকার সঙ্গে সঙ্গে একজন অশ্বারোহী চলিত, পৰ্বত-পথে বা জঙ্গলে, বক্ষশন্য ময়দানে বা নদীতীরে, সে অশ্বারোহী মহত্তের জন্যও শিবিকা হইতে দরে যাইত না। নিশীথে যখন সরয সহচরীর সহিত সামান্য কোন মন্দিরে, দোকানে বা ভদ্রগাহে আশ্রয় গ্রহণ করিতেন, রজনীতে সময়ে সময়ে একজন অনিদ্র যোদ্ধা বশা হস্তে তথায় পদচারণ করত। নারীমাত্রেই এ সকল বিষয় বুঝিতে পারে, এ সকল বিষয় দেখিতে পায়। পরেষের যত্ন, পরেষের আগ্রহ, পরেষের হৃদয়ের আবেগ নারীর চক্ষতে গোপন থাকে না। সরয শিবিকার ভিতর হইতে সেই অবিশ্রাস্ত অশ্বারোহীকে দেখিতেন, নিশীথে সেই অনিদ্র যোদ্ধাকে দেখিতেন। সেই দেব-নিন্দিত আকৃতি দেখিতে দেখিতে সরষরে নয়ন ঝলসিত হইল, সেই দন্দমনীয় আগ্রহচিহ্ন দেখিয়া সরযর হৃদয় আনন্দ, প্রেম ও উদ্বেগে প্লাবিত হইল। সন্ধ্যার সময় যখন সরয সেই যোদ্ধাকে ভোজন করাইতে আসিতেন, মৌনাবলম্বী যোদ্ধার দর্শনে সরষ অবনতমুখী হইতেন, ভাল করিয়া আহার করাইতে পারিতেন না। প্রাতঃকালে শিবিকায় আরোহণের সময় যখন সরয সেই যোদ্ধাকে অশ্বপঠে উপবিষ্ট দেখিতেন, তাঁহার মলান মখমণ্ডল হইতে সরয সহজে নয়ন ফিরাইতে পারিতেন না। কয়েক দিন এইরুপে ভ্ৰমণানন্তর সকলে রাজগড়ে উপস্থিত হইলেন। জনাদন সন্ধ্যার সময় দগের নীচে একটী গ্রামে উপস্থিত হইয়া মহারাষ্ট্ররাজের নিকট সমাচার পাঠাইলেন, রাজার অনুমতি হইলে পরদিবস দগে প্রবেশ করিবেন। সেই দিন রজনীতে আহারাদি প্রস্তুত করিতে কিছু বিলম্বব হইল। জনাদন কিছু জলযোগ করিয়া শয়ন করিতে যাইলেন, রাত্রি এক প্রহরের সময় সরষবোলা রঘুনাথকে ভোজন করাইলেন। ভোজনাস্তে রঘুনাথ অন্যদিনের ন্যায় গহে হইতে বহিস্কৃত হইলেন না, ক্ষণেক ইতস্ততঃ করিতে লাগিলেন। অনেকক্ষণ পর যেখানে সরয একাকী বসিয়াছিলেন, তথায় ধীরে ধীরে যাইয়া নতশিরে দণ্ডায়মান হইলেন। হৃদয়ের উদ্বেগ দমন করিয়া স্থিরস্বরে কাঁহলেন-দেবি, এক্ষণে আমাকে বিদায় দিন। রঘুনাথের উচ্চারিত এই কথাগুলি যেন তৃষিতের পক্ষে বারিধারার ন্যায় সরযর কানে লাগিল। সরষরে হৃদয় নাচিয়া উঠিল, সরয আরক্ত মখে নত করিয়া ক্ষণেক দণ্ডায়মান হইলেন। রঘুনাথ পুনরায় বলিলেন—দেবি, বিদায় দিন, কল্য আপনারা রাজপ্রাসাদে যাইবেন, এ দরিদ্র সৈনিক পুনরায় নিজ কায্যে যাইতে বাসনা করে। এই কথা শুনিয়া সরয লজ্জা বিস্মত হইলেন, নয়নদ্বয়ে জল মাছিয়া নারীর মমতাপর্ণে স্বরে বলিলেন,—আপনি আমাদিগের জন্য ষে যত্ন করিয়াছেন, পিতার জন্য, আমার জন্য যে পরিশ্রম করিয়াছেন, তাহার জন্য ভগবান আপনাকে যুদ্ধে জয়ী করন, আপনার মনস্কামনা পণ করন। আমরা সে যত্নের কি প্রতিদান করিতে পারি ? রঘুনাথ বিনীতস্বরে উত্তর দিলেন–রাজাদেশে আপনাদিগকে রাজগড়ে নিরাপদে আনিতে পারিয়াছি এটা আমার পরম ভাগ্য, ইহাতে আমার কিছু গণে নাই। তথাপি দরিদ্র সৈনিকের যত্নে যদি তুষ্ট হইয়া থাকেন, তবে,—তবে,—এ দরিদ্র সৈনিককে বিস্মত হইবেন না। কথাটী সরষ বঝিলেন, মুখখানি অবনত করিলেন। রঘুনাথ তখন সাহস পাইয়া, লজ্জা বিস্মরণ করিয়া কহিতে লাগিলেন-এ দরিদ্র সৈনিক যদি উচ্চ আশা করিয়া থাকে, আপনি অপরাধ লইবেন না। আপনার পিতা প্রসন্ন চক্ষতে আমার প্রতি দণ্টি করিয়াছেন, ভরসা করি আপনিও আমার প্রতি অপ্রসন্ন হইবেন না। যদি ভগবান আমার মনোবাঞ্ছা পণ করেন, যদি জীবনের চেণ্টা ও আশা ফলবতী হয়, তবে একদিন মনের কথা বলিব, সে পৰ্য্যন্ত এ দরিদ্র সৈনিককে এক একবার স্মরণপথে স্থান দিবেন। বিনীতভাবে বিদায় লইয়া রঘুনাথ চলিয়া গেলেন। সরয একদণ্ড কাল সেই পথ চাহিয়া রহিলেন, মনে মনে কি চিন্তা করিতে লাগিলেন। দ্বিপ্রহর রজনীর সময় একটী দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করিয়া মনে মনে বলিলেন,—সৈনিকশ্রেষ্ঠ ! তুমি চিরকাল এ দাসীর স্মরণপথে জাগরিত থাকিবে, ভগবান সাক্ষী থাকিবেন। ১৮3