পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রহমৎখাঁ। ক্ষত্রিয়প্রবর আপনি আমার সহিত ভদ্রাচরণ করিয়াছেন, আমি অভদ্রাচরণ করিব না, আপনার নিকট কোন বিষয় গোপন রাখিব না। আপনার সেনার মধ্যে বিশেষ অনুসন্ধান করিয়া দেখন, সকলে প্রভুভক্ত নহে। কল্য দগাক্রমণের গোপমানসেন্ধান আমি পবেই প্রাপ্ত হইয়াছিলাম, সেই জন্যই সমস্ত সেনা সমস্ত রাত্রি সসজ ও প্রস্তুত ছিল। অনুসন্ধানদাতা আপনারই একজন সেনা। ইহার অধিক বলিতে পারি না, সত্যলম্বেন করিব না। এই বলিয়া রহমৎখাঁ ধীরে ধীরে প্রহরিগণের সহিত প্রাসাদাভিমুখে চলিয়া গেলেন। রোষে শিবজাঁর মুখমণ্ডল একেবারে কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করিল, নয়ন হইতে অগ্নিসফলিঙ্গ বাহির হইতে লাগিল, শরীর কাঁপিতে লাগিল। তাঁহার বন্ধগণ বুঝিলেন, এক্ষণে পরামর্শ দেওয়া ব্যথা, তাঁহার সৈন্যগণ বঝিল, অদ্য প্রমাদ উপস্থিত। جعقيد জয়সিংহ শিবজীকে এতদবস্থায় দেখিয়া তাঁহাকে কথঞ্চিৎ শাস্ত করিয়া পরে সৈন্যদিগকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন,—এই দগে আক্রমণ করা হইবে তোমরা কখন জানিয়াছিলে ? সৈন্যগণ উত্তর দিল,—এক প্রহর রজনীতে। জয়সিংহ। তাহার পবে কেহই এ কথা জানিতে না ? f সৈন্যগণ। রজনীতে কোন একটী দাগ আক্রমণ করিতে হইবে জানিতাম; এই দগ’ আক্রমণ করিতে হইবে তাহা জানিতাম না। জয়সিংহ। ভাল, কোন সময়ে তোমরা দাগে পেশছিয়াছিলে ? সৈন্যগণ। অনুমান দেড়প্রহর রজনীর সময়। জয়সিংহ। উত্তম, একপ্রহর হইতে দেড়প্রহর মধ্যে তোমরা সকলেই কি একত্র ছিলে ? কেহ অনুপস্থিত ছিল না ? যদি হইয়া থাকে, প্রকাশ কর। একজনের দোষের জন্য সহস্ৰ জনের গ্রানি অনুচিত। তোমরা দেশে দেশে গ্রামে গ্রামে রাজা শিবজীর অধীনে যুদ্ধ করিয়াছ, রাজা তোমাদিগকে বিশ্বাস করেন, তোমরা এরপে প্রভু কখনও পাইবে না। আপনাদিগকে বিশ্বাসের যোগ্য প্রমাণ কর, যদি কেহ বিদ্রোহী থাকে তাহাকেও আনিয়া দাও। যদি সে কল্য রজনীর যুদ্ধে মরিয়া থাকে তাহার নাম কর, অন্যায় সন্দেহে কেন সকলের নাম কলুষিত হইতেছে ? সৈন্যগণ তখন কল্যকার কথা স্মরণ করিতে লাগিল, পরস্পরে কথা কহিতে লাগিল, শিবজাঁর ক্ৰোধ কিঞ্চিৎ হ্রাস হইল। কিঞ্চিৎ সস্থ হইয়া শিবজী বলিলেন,—মহারাজ ! অদ্য যদি সেই কপট যোদ্ধাকে বাহির করিয়া দিতে পারেন, আমি চিরকাল আপনার নিকট ঋণী থাকিব। চন্দ্ররাও নামে একজন জমলাদার অগ্রসর হইয়া ধীরে ধীরে বলিলেন,—রাজন! কল্য একপ্রহর রজনীর সময় যখন আমরা যুদ্ধযাত্রা করি, তখন আমার অধীনস্থ একজন হাবিলদারকে হানসন্ধান করিয়া পাই নাই। যখন দগতলে পৌছিলাম তখন তিনি আমাদের সহিত যোগ দিলেন । শিবজী। সে কে, এখনও জীবিত আছে ? বিদ্রোহীর নাম শনিবার জন্য সকলে নিস্তব্ধ! শিবজীর ঘন ঘন নিশ্বাসের শব্দ শনা যাইতেছে, সভাতলে একটী সচিকা পড়িলে বোধ হয় তাহার শব্দ শনা যায়। সেই নিস্তব্ধতার মধ্যে চন্দ্ররাও ধীরে ধীরে বলিলেন,—রঘুনাথজী হাবিলদার ! সকলে নিবাক, বিসময়-স্তব্ধ! চন্দ্ররাও একজন প্রসিদ্ধ যোদ্ধা ছিলেন, কিন্তু রঘুনাথের আগমনাবধি সকলে চন্দ্ররাওয়ের নাম ও বিক্রম বিস্মত হইয়াছিলেন। মানব-প্রকৃতিতে ঈষ্যার ন্যায় ভীষণ বলবতী প্রবত্তি তার নাই। শিবজীর মুখমণ্ডল পনরায় কৃষ্ণবর্ণ হইয়া উঠিল, ওঠে দন্ত স্থাপন করিয়া চন্দ্ররাওকে লক্ষ্য করিয়া সরোষে বলিলেন,—রে কপটাচারি! বাথা এ কপট অভিযোগ করিতেছিস! তোর নিন্দা রঘুনাথের যশোরাশি পশ করবে না, রঘুনাথের আচরণ আমি স্বচক্ষে দেখিয়াছি। কিন্তু মিথ্যা নিন্দকের শাস্তি সৈন্যেরা দেখকে। সেই বজ্রহন্তে শিবজী লৌহবশ উত্তোলন করিয়াছেন, সহসা রঘুনাথ সম্মুখে আসিয়া বলিলেন,—মহারাজ ! প্ৰভু চন্দ্ররাওয়ের প্রাণ সংহার কারবেন না, তিনি মিথ্যাবাদী নহেন, আমার দগতলৈ আসিতে বিলম্ব হইয়াছিল। আবার সভাস্থল নিস্তন্ধ, সকলে নিবাক, বিস্ময়-স্তন্ধ। పిసి&