বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংসার বিন্দর। উমা, ভালবাসাই আমাদের প্রথম ধৰ্ম্ম, কিন্তু তা ভিন্ন আমাদের আরও কিছ শিখতে হয়। তা না হলে সংসার চলে না। যিনি আমাদের জন্য এত করেন, তাঁর মনটী সব্বদা তুষ্ট রাখবার জন্যে, তাঁর গহটী সব্বদা প্রফুল্ল রাখবার জন্যে আমরা যেন একটু যত্ন করতে শিখি। অনেক সময় একটী মিস্ট কথায় ক্ষোভ নিবারণ হয়, একটী মিন্ট কথায় ক্রোধ শান্তি হয়, আমাদের একটু যত্ন ও প্রফুল্লতায় সংসারটা প্রফুল্ল থাকে। সংসারের জবালা যদি একটা সহ্য করতে শিখি, ক্ৰোধ একটা সম্বরণ করতে শিখি, অভিমান একটা ত্যাগ করে ক্ষমাগণ শিখি, তা হলে সংসারটী বজায় থাকে, না হলে জীবন তিক্ত হয়। উমা, আমি অনেক নিদোষ চরিত্র পরিষে ও নিন্দোষ চরিত্রা নারী দেখেছি, তাদের ভালবাসারও অভাব নেই, তথাপি তাদের সংসার মশানভূমি, জীবন তিক্ত। একটু ধৈৰ্য্য, একট ক্ষমা সংসারের পথকে মসৃণ করে, সে গণগুলির অভাবে উৎকৃষ্ট সংসারও কণ্টকময় হয়, তখন তাঁরা মনে করেন, পাব হতে একটু যত্ন করলে এ জীবনে কত সুখ হতে পারত। কিন্তু তখন অবসর চলে গেছে। প্রণয় একবার ধবংস হলে আর আসে না, জীবনের খেলা একবার সাঙ্গ হলে আর সে খেলা আরম্ভ করতে আমাদের অধিকার নেই। উমা। বিন্দদিদি, তোমারই কাছে বাল্যকালে এ কথাটী আমি শনেছিলাম, তালপুকুরে তোমাদের দরিদ্র সংসার দেখে এ শিক্ষাটী আমি শিখেছি, ভগবান জানেন এতে আমার কোন ক্রটি হয়নি। লোকে আমাকে ধনাভিমানিনী বলত, কিন্তু যিনি আমার গরেন, তিনিই আমাকে সব্বদা মুক্তাহার ও হীরকাভরণ পরতে দেখতে ভালবাসতেন, সেই জন্য আমি পরতেম, এইমাত্র আমার অভিমান। লোকে আমাকে রপোভিমানিনী বলত, কিন্তু দিদি, তুমি জান, সে রপে স্বামী একদিন তুট ছিলেন, সেই জন্য আমার অভিমান, তাঁকে তুষ্ট রাখা ভিন্ন আমার জীবনের অন্য ইচ্ছে ছিল না। যখন কলকেতায় এলেম, তখন আমি এই ষত্ব দ্বিগণ করলেম, কেননা আমি ভিন্ন এ বাড়ীতে আর মেয়েমানুষ ছিল না, আমি যদি একটু যত্ন না করি কে করবে বল ? বিন্দ। উমা, তুমি যে একটা করবে তা আমি জানতেম, তোমাকে ছেলেবেলা থেকে আমি জানতেম, অন্যে তোমাকে দোষ দিয়েছে, আমি দোষ দিইনি। ধৈর্য্য, ক্ষমা, একটু যত্ন-স্নেহ ও প্রফুল্লতাই আমাদের কত্তব্য, এগুলি তুমি শিখেছ, সকলে শিখে না। পবেকালে আমরা বড় বড় সংসারে বৌমানুষ হয়ে থাকতেম, শাশড়ীর ভয়ে, ননদের ভয়ে, জায়ের ভয়ে, আমাদের স্বাভাবিক ঔদ্ধত্য অনেক চাপা পড়ত, আমরা মুখ বন্ধ করে থাকতেম, শাশড়ীর আদেশে সংসার চলত। এখন সবাই পথক পৃথক থাকতে শিখেছে, ছেলেরাও যা ইচ্ছে করে, বৌয়েরাও আপনাদের কত্তব্য ভুলে যায়, সংসারসখে অনায়াসে বিনন্ট হয়। উমা । বিন্দ-দিদি, আমারও অনেক সময় মনে হয়, সকলে একত্রে থাকবার প্রথাই ভাল ছিল, ছেলেরা শীঘ্ৰ কুপথে যেতে পারত না, মেয়েরাও নমতা শিখত। বিন্দর। উমা, সখেদঃখ সকল প্রথাতেই আছে। কালীতারা বহৎ পরিবারে আছে, আহা! কালী কি সখে আছে ? একত্র বাস করবার কি এই সুখ ? উমা। কালীদিদির দুঃখের অন্য কারণ। বদ্ধ স্বামীর সঙ্গে বিবাহ হয়েছে, সে চিরজীবন প্রণয়সখে বঞ্চিত। বিন্দর। আমি প্রণয়সখের কথা বলছি না। প্রত্যহ সকাল থেকে দাপরে রাত্রি পয্যন্ত পথের মটের চেয়েও খেটে খেটে যে সে রোগগ্রস্ত হয়েছে; সকাল থেকে সন্ধ্যা পৰ্য্যন্ত যে নিন্দোষে পথের কাঙ্গালী অপেক্ষাও গঞ্জনা ও গালি খায়, তার কারণ কি ? উমা। বিন্দদিদি, কালীদিদির খড়-শাশড়ীরা মন্দ লোক, সেই জন্যে। বিন্দ। তা বড় সংসারে সকলেই যে ভাল লোক হবে, তারই সম্ভাবনা কি ? একজন মন্দ হলেই সংসার তিক্ত হয়, সমস্ত দিন খিটিমিটি ও কোন্দল ; যে কালীতারার মত ভালমানষে, তারই অধিক যাতনা। এই সব দেখেই যাদের একটা টাকা হয়, তারা ভিন্ন থাকতে চায়, না হলে আপনার লোক কে ইচ্ছে করে ত্যাগ করে বসে। তা ভিন্ন থেকেও যদি আমাদের যার যেটুকু করা আবশ্যক তাই করি, শাশড়ীর ভয়ে যেটুকু শিখতেম, সেইটুকু যদি নিজ বৃদ্ধিতে শিখি, সুয় আসার লক্ষ থেকে এখনকার মেয়েরা এটী বড় শিখে না, কালে বোধ হয় শিখবে। - ○ デ>