পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংলার সন্ধা দরে খেলা করিতেছিল, দৌড়াইয়া আসিয়া বলিল, “দিদি ডাকছিলে ?” বিন্দ হাসিতে হাসিতে বলিলেন, হাঁ বোন, ডাকছিলেম। বলি তুমি শরৎবাবর একটু যত্ন করতে পারবে ? বালিকার কণ্ঠ হইতে ললাট প্রদেশ পর্যন্ত রঞ্জিত হইল। সে দৌড়াইয়া পলাইয়া গেল। উনবিংশ পরিচ্ছেদ ঃ শারদীয়া পজা আশ্বিনে অম্বিকাপজার সময় আগত হইতে লাগিল। ছেলেপলের বড় আমোদ। নতন কাপড় হইবে, নতন জতা হইবে, নতন পোষাক বা টপি হইবে, ইস্কুলের ছয়টি হইবে, পাজার সুম ইন অমান দ গল কাল আসন লাভ কৰে। বালকবন্দ আহাদে খানা । গৃহস্থগহিণীদিগের ত আনন্দের সীমা নাই। কেহ বড় তত্ত্বের আয়োজন করিতেছেন, নতন জামাইকে ভাল রকম তত্ত্ব করিয়া বেয়ানের মন রাখিবেন। কেহ বড় তত্ত্ব প্রত্যাশা করিতেছেন, পাসকরা ছেলের বিবাহ দিয়া অনেক অর্থ লাভ করিয়াছেন, ঘড়ী, ঘড়ীর চেন খারাপ হইয়াছিল অপরাহুে ছাদে পা মেলাইয়া বসিয়া বৃদ্ধিমতী পড়শী-গহিণীদিগের সহিত পরামর্শ করিতেছেন, "এবার দেখব বেয়ান কেমন তত্ত্ব করে, তত্ত্বের মত তত্ত্ব না করে, লাথি মেরে ফেলে দেব। বিয়ের সময় বড় ফাঁকি দিয়েছে, এবার দেখব কে ফাঁকি দেয়। আমার ছেলে কি বানের জলে ভেসে এসেছে, এমন ছেলে কলকেতায় কটা আছে ? মিনষের যেমন বাহাত্তরে ধরেছে, এমন ছেলেরও এমন ঘরে বিয়ে দেয়। তা দেখব, দেখব, তত্ত্বের সময় কড়াগন্ডা বুঝে নেব, নৈলে আমি কায়েতের মেয়ে নই।” রোরুদ্যমানা বালবধ বাপের বাড়ী যাইবার জন্য তিন মাস হইতে ব্যথা ক্ৰন্দন করিতেছে, গহিণী তত্ত্বটী না দেখিয়া বোঁ পাঠাইবেন না। সামান্য ঘরের যাবতীগণও দিন গণিতেছে, সবামী বিদেশে চাকরী করেন, পাজার সময় অনেক কন্টে ছয়টি পাইয়া একবার ভাষার মুখ দশন করেন। এবার কি তিনি আসিবেন ? সাহেব কি এবার ছয়টি দিবেন ? হ্যাঁ গা, সাহেবদের কি একট দয়া মমতা নাই ? তাঁদেরও কি সত্ৰী পরিবারের জন্য একটা মন কেমন করে না ? বাব মহলেও আনন্দের সীমা নাই। কাহারও বজরা ভাড়া হইতেছে, নাচ গানের ভাল রকম আয়োজন হইতেছে, আর কত কি আয়োজন হইতেছে, আমরা তাহা কিরাপে জানিব ? আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবরে কাজ কি ? পল্লীগ্রামেও আনন্দের সীমা নাই। মাতা বসুমতীর অনুগ্রহ অপার, কৃষকগণ ভাদ্র মাসে শস্য কাটিয়া জমীদারের খাজনা দিতেছে, মহাজনের ঋণ পরিশোধ করিতেছে, বৎসরের মধ্যে এক মাস বা দই মাসের জন্য গহে একটা ধান জমাইতেছে। কৃষকবধাগণ গোপনে চোরের মত সেই ধান একটা সরাইয়া হাতের দাগাছী শাঁকা করিতেছে, বা হাটে একখানি নতন কাপড় কিনিতেছে। বর্ষার পর সন্দের বঙ্গদেশ যেন স্নাত হইয়া সন্দর হরিদ্বণ বেশ ধারণ করিল; আকাশ মেঘরােপ কলঙ্ক ত্যাগ করিয়া শরতের আহাদকর জ্যোৎস্না বর্ষণ করিতে লাগিল, বায় নিৰ্ম্মল হইল, বড় গরম নহে, বড় শীতল নহে, মনুষ্যশরীরের সখ বদ্ধন করিয়া মন্দ মন্দ বহিতে লাগিল। গহস্থের ঘরও ধনধান্যে পণ হইল, গহন্থের মন একটা আনন্দে পরিপণ হইল, চালে নতন খড় দিয়া ছাউনি বাঁধা হইল। বঙ্গদেশে শারদীয়া পাজার যে এত ধমধাম, তাহার এই কারণ অন্য কারণ আমরা জানি না। কিন্তু আনন্দময় শরৎকাল সকলের পক্ষে সখের সময় নহে। দরিদ্রের দঃখ অপনীত হয়, কিন্তু শোকাত্তের শোক অপনীত হয় না। উমাতারার মাতা কলিকাতায় আসিলেন। বিন্দ বার বার উমাকে দেখিতে যাইতেন, কিন্তু উমার রোগের শান্তি হইল না। ধনঞ্জয়বাব দিন কতক একট অপ্রতিভের ন্যায় বোধ করিলেন, কিন্তু অনেক দিনের অভ্যাস তাঁহার চরিত্রে গভীররাপে অঙ্কিত হইয়াছে, তাহা অপনীত হইল না, তিনি বাড়ীর ভিতর আসা বন্ধ করিলেন, বাহিরেই আহারাদি করিবার বন্দোবস্ত করিলেন। উমার মাতা পনরায় পল্লীগ্রামে যাইবার বন্দোবস্ত করিতে লাগিলেন, কিন্তু দিন দিন কন্যার অবস্থা দেখিয়া সহসা কলিকাতা ত্যাগ করিতেও ○、○