পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রহণ করিয়া তারিণীবাব আজ স্বজাতির নাম উজল করিলেন, সমাজের গৌরব বন্ধন করিলেন, ইত্যাদি। তারিণীবাবরে বন্ধগণ বলিলেন,--তা নবমবষীয়া বালিকা গ্রহণ করিবেন না কেন ? তারিণীবাবর বয়সই বা কি ? এখনও চল্লিশ পার হয় নাই, এই ত বিবাহের উপযুক্ত কাল। আহা, মুখখানি যেন কাত্তিকের মত, শরীরখানি যেন গণেশের মত, কত কাল তপস্যা করিয়া কন্যা এরপে বর লাভ করে, ইত্যাদি। এই সকল কথা শুনিয়া তারিণীবাবর মুখে আর হাসি ধরিত না, লকোইয়া দপণে ঘন ঘন আপনার মখখানি দেখিতেন, চুলে ঘন ঘন কলপ দিতেন, কাহার সাধ্য একগাছি পাকা চুল বাহির করে ? নাপিতের মাহিয়ানা দ্বিগণ করিয়া প্রত্যহ ক্ষৌরকায্য সম্পাদন করিতেন, দাড়ি গোপ এখনও উঠে নাই বলিলেও চলে ! সবণকার দিন দই তিন বার করিয়া তারিণীবাবর বাড়ী হাঁটাহাঁট করিতেছে, পরাতন গহনা ভাঙ্গিয়া নতন ধরণের গহনা করিবার ফরমায়েশ হইয়াছে, সেই নতন গহনাতে প্রেমিক তারিণীবাব নববধর অঙ্গ ভূষিত করিয়া দিবেন! কথাটা এক একবার মনে হইতেছে, আর বন্ধের বকেটা নাচিয়া উঠিতেছে। বালিকার সন্দর ললাটে সিথি পরাইয়া দিবেন, ললিতবাহ-লতা হাতে ধরিয়া আদর করিয়া তাব্ৰিজ, বাজ পরাইয়া দিবেন। * বক্ষের উপর সথের হার ঝালাইয়া দিবেন, কটীতে রসের চন্দ্রহার দোলাইবেন! ভাবিতে ভাবিতে ব্যুদ্ধের শরীরটি রোমাঞ্চিত হইল, বড়ো বুঝি পাগল হয়! তারিণীবাবর বাড়ী আজ লোকারণ্য এবং জ্ঞাতিকুটবে পরিপণ। দাসদাসী গোলাপী কাপড় পরিয়া ছাটাছটি করিতেছে। পাকুর হইতে বড় বড় মাছ, হাট হইতে চাঙ্গারি করিয়া শাক শবজি, বদ্ধমান হইতে খাজা, সীতাভোগ ও মিহিদানা, কলিকাতা হইতে রসগোল্লা সংগৃহীত হইয়া বাড়ী পণ্য হইয়াছে। বাড়ীতে যেন দিবারাত্রি যজ্ঞ হইতেছে, বাহিরে দিবারাত্রি বাদ্য ও লোকের কোলাহল, সমস্ত গ্রামে হুলস্থল পড়িয়া গিয়াছে! দরিদ্র বিন্দ ও সন্ধা গলা ধরাধরি করিয়া কাঁদিল, একদিন সন্ধ্যার সময় লুকাইয়া জ্যেঠাইমার ঘরে গিয়া তাঁহার গলা ধরিয়া কাঁদিল । কিন্তু আজ আনন্দের দিন-দুঃখিনীদের কান্না কে শুনে, কে দেখে ? সজোরে ঢাক বাজাও, রোশনচোঁকির শব্দে গ্রাম কল্পিত কর, ভেরিরবে সমস্ত গ্রামে প্রচার কর–আজ গ্রামের আনন্দের দিন, আজ মহামান্য নাজির মহাশয়ের শুভবিবাহ। o এদিকে কন্যার বাড়ীও আজ লোকারণ্য। মিত্রগণ এককালে গ্রামের বড়লোক ছিলেন, তালপুকুরে ও নিকটস্থ গ্রামসমুহে তাঁহাদের জ্ঞাতিকুটুম্বের অভাব ছিল না, তবে সন্ধ্যার অন্ধকারে যেমন পক্ষিকুল নিজ নিজ কুলায়ে লীন হইয়া থাকে, মিত্রদিগের দারিদ্র্য ও দরবস্থার সময় সেইরাপ জ্ঞাতিকুট বগণ নিজ নিজ কুলায়ে লীন হইয়াছিলেন, কেহ সাড়াশব্দ করেন নাই, একবার তত্ত্বতল্লাস করেন নাই। আবার সায্যের উদয়ে যেরপে পক্ষিকুল মহা আনন্দে শব্দ করিয়া পনরায় আকাশ আচ্ছন্ন করে, আজি মিত্রদিগের সৌভাগারবির উদয়ে দশ গ্রাম হইতে জ্ঞাতিকুটবে আসিয়া, গোপীর মার পরাতন গহ আচ্ছন্ন করিল ! চারার মা সম্পকে গোপবালার মাসী হয়। বড় ঘরে বিবাহ হইয়াছে, স্থলে শরীরখানি গহনা-ভরা, মুখে সদাই হাসি। এতদিন পরে বোনঝিকে মনে পড়িল, পালকী করিয়া মিত্রদের বাড়ী আসিলেন। হেসে হেসে গরীবণী বলিলেন,—তা বোন, আমার চার ও যে, গোপীও সে— আহা! এতদিন বাছা গোপীকে দেখিতে পাই নাই, মনে করি আসি আসি, তা আমাদের যে সংসার, সহজে কি আসা হয় ? তা, বাছা গোপী ভাল আছে ? বেচে থাকুক, শ্বশুরবাড়ীর গৃহলক্ষী হয়ে থাকুক, সোণার চাঁদের মত ছেলের মুখ দশন করকে। মল্লিকদের বাড়ী যাতায়াত আছে, বাছা গোপীকে সবাদাই দেখে যাব। আমরা আসিব না ত কে আসিবে ? কথায় বলে,—মাও যে, মাসীও সে, মা মাসী বাছাকে দেখবে না ত দেখবে কে ? ইত্যাদি। হরির মা সম্পকে গোপীর পিসী হয়। সামান্য গহস্থঘরে বিবাহ হইয়াছে, শরীর শীণ, স্বভাবটী একটা রক্ষ। ভ্রাতার মরণের পর মিত্রবাড়ীতে পা দেন নাই, তবে গোপীর মা অন্নকটে -লালায়িত হইয়া অনেক অননয় বিনয় করায় একবার পাঁচ টাকা ধার দিয়াছিলেন, তাহাও ঘটী বাটী বিক্রয় করিয়া, সদসদ্ধ আদায় করিয়া লইয়াছেন। আজ পিসীমার শরীর স্নেহে গলিয়া পড়িতেছে, গোপীর চুল বেধে দিতেছেন, গহনা পরাইয়া দিতেছেন, কত সেবাশশ্রেষা! বলিলেন ! Bరిa