পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৫৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

जभांछ Nadst লোক এবং পরম সুহৃদ-জমীদারমহাশয়ের যাহা হইবে আমাদেরও তাহা হইবে,— এইরূপ মনে ঠিক করিয়া আহেের বসিয়া গেলেন । আবার অনেক বীরপুরুষ জমীদারের ভয়ে আসিয়াছিলেন, আবার সমাজের ভয়ে আহারের পূৰ্ব্বেই গা ঢাকা দিলেন। সমাজ তাহাদিগের বীরত্ব ও তীক্ষ বুদ্ধির অনেক প্রশংসা করিল ! আহারের পর হেমচন্দ্র রমণীকান্তকে বলিলেন,-আপনার অনুগ্রহে আমি আজ বড়ই সম্মানিত হইলাম, আপনার খাতিরে আপনার অনেক আত্মীয়বান্ধব আজ এখানে আহার করিয়াছেন, দরিদ্র হেমচন্দ্রের কথায় এরূপ ক্রিয়াতে একজনও উপস্থিত হইত না । রমণীকান্ত উত্তর করিলেন,—হেমচন্দ্র, অামার আত্মীয়বান্ধব অধিকাংশই বাহিরে ভোজন করিতেছে, দেখিবে আইস । দুইজনে ধীরে ধীরে বাহিরে গেলেন । স্বন্দর চন্দ্রীলোক নৈশ জগৎকে বড় শোভিত করিয়াছে, বসন্তের মন্দ মন্দ বায়ু ক্ষেত্রের উপর বহিয়া যাইতেছে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বন্য পুষ্পগুলি সেই চন্দ্রালোকে ফুটিয়া নীরবে সুগন্ধ বিকাশ করিতেছে। প্রায় অন্ধক্রোশ পথ যাইয়া দুইজনে একটী বিস্তীর্ণ আম্রকাননে উপস্থিত হইলেন, হেমচন্দ্ৰ দেখিলেন, তথায় যেন একটী মেলা বসিয়া গিয়াছে, প্রায় দশ সহস্ৰ লোক মহা উল্লাসে থাইতে বসিয়াছে। রমণীবাবুর যত প্রজা বিবাহ দর্শন করিতে আসিয়াছিল, রমণীবাবুর আদেশে সকলকে এই আম্রকাননে খাওয়াইবার আয়োজন করা হইয়াছে রমণীবাবু সকলকে নূতন বস্ত্ৰ দিয়াছেন, মেয়েদের নূতন সাটী দিয়াছেন, তাহাদিগের কোলের ছেলেদের ..হতে এক একটা টাকা দেওয়া হইয়াছে । মহা উল্লাসে সকলে ভোজনে বসিয়াছে, ইতিমধ্যে রমণীবাবু তথায় উপস্থিত হওয়ায় সকলে সহসা দণ্ডায়মান হইয়া উচ্চৈঃস্বরে জয় জয় নাদে জমীদারকে সম্ভাষণ করিল ! মেয়েরাও ঘোমটা টানিয়া, ছেলে কোলে করিয়া, বাবুমহাশয়কে অনেক স্তুতিবাদ করিল। দরিদ্রদিগের এই উল্লাস, ভক্তি ও স্নেহ দেখিয়া রমণীকান্তের চক্ষুতে জল আসিল । ধীরে ধীরে হেমচন্দ্রকে পার্থে ডাকিয়া লইয়া গিয়া রমণীকান্ত গম্ভীরস্বরে বলিলেন,— ঐ শুন গগনভেদী জয় জয় নাদ । ঐ শুন আনন্দধ্বনি ও উল্লাসশব্দ ! হেমচন্দ্র ! ইহার আমার আত্মীয়বান্ধব। তুমি আমি যেমন হিন্দু, ইহারাও সেইরূপ হিন্দু, ইহার আমাদের এক ধৰ্ম্মাবলম্বী,—এক হিন্দুজাতীয় । পুরাকালে সকল হিন্দুদিগের মধ্যে আহার ব্যবহার ছিল, কি ছার আধুনিক নিয়মে আমরা বিভিন্ন হইয়া জাতীয় দুৰ্ব্বলতা প্রাপ্ত হইয়াছি! আমাদের মধ্যে অনৈক্য সাধন করা, দুর্বলতা সঞ্চার করা অনেকের অভিপ্রায়, আমরা নিজের চেষ্টায় যদি ঐক্য সাধন করিতে পারি, তবে হিন্দুজাতির গৌরবের -কি আর সীমা থাকিবে ? যতদিন সেরূপ ঐক্য না হয়, ততদিন, বৃথা আমাদের ধৰ্ম্মশিক্ষা, বৃথা আমাদের সামাজিক উন্নতি, বৃথা আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলন! আর. যখন আমরা পুনরায় জাতীয় ঐক্যবলে বলবান হইব, তখন আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নতি কে রোধ করিবে ? হেমচন্দ্র । আমাদের উন্নতি আমাদের নিজের হস্তে, অন্তের অক্ষগ্রহসাপেক্ষ নহে। ঐ আবার শুন, গগনভেম্বী জয় জয় নাদ । ঐ দশ সহস্ৰ লোক আমার আত্মীয়-বন্ধু,