পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब्रट्ञभ ब्रध्नावल" কমলা নিরুপমা সন্দরী। তাঁহার নয়ন দটী অতিশয় শাস্তজ্যোতিঃ ও চিন্তাপ্রকাশক, সমস্ত মুখখানি শাস্ত ও গাঢ় চিন্তায় লান। দেহ অতি স্কুমার, বিধবার মলিন বসে সে সকুমার দেহ আবত হইয়া শৈবাল-বেষ্টিত পদ্মবৎ শোভা পাইত। কিন্তু সে প্রস্ফুটিত পন্ম নহে, সায়ংকালে মাদিতপ্রায় পশম যেরপে জলহিল্লোলে ঈষৎ কল্পিত হইতে থাকে, কোমলাঙ্গী তপস্বিনী সেইরপে সততই চিন্তায় মগ্ন, লোকালয়ে সেইরাপ মাদিতপ্রায় হইয়া থাকিতেন। কমলা চন্দ্রশেখরকে পিতা বলিয়া ডাকিতেন, চন্দ্রশেখরের গহকায্য সমস্ত তিনিই নিৰ্বাহ করিতেন, কাযে অবসর পাইলেই আবার সেই নিভৃত নিবিড় পাদপাবত স্থানে যাইতেন। শিখণ্ডিবাহন তাঁহাকে উপহাস করিয়া বনদেবী বলিয়া সম্বোধন করিতেন, তদনুসারে আশ্রমের অনেকেই কমলাকে বনদেবী বলিয়া ডাকিত। ফলতঃ তিনি যেরপে একাকী বনে বনে বিচরণ করিতে ভালবাসিতেন, তাহাতে তাঁহাকে সেই শান্ত পবিত্র ছায়ান্বিত আশ্রমের অধিকঠাত্রী দেবী বলিয়া বোধ করা কিছুই বিচিত্র নহে। অদ্য সন্ধ্যার সময় কমলা সরলাকে লইয়া বনবিচরণ করিতেছিলেন, এক্ষণে দুইজনে নদীতীরে বসিয়া রহিয়াছেন । কমলা সরলাকে ভালবাসিতেন, সে সরলচিত্ত বালিকাকে না ভালবাসিয়া কে থাকিতে পারে ? সরলাও কমলার দুঃখে দুঃখ প্রকাশ করিতেন, আপনার দুঃখ বিস্মত হইয়া সেই বিধবার দঃখে দুঃখী হইতেন। সুতরাং ক্রমশঃ তাঁহাদিগের মধ্যে ভাল-এ বাসার সঞ্চার হইয়াছিল । পাঠক জিজ্ঞাসা করিবেন, সরলার আবার দুঃখ কি ? বালিকার হৃদয়ে চিস্তা কিসের? আমরা উত্তর করিব, সরলা আর বালিকা নাই, তাহার হৃদয়কোরকে প্রণয়কীট প্রবেশ করিয়াছে। যেদিন হইতে ইন্দ্রনাথ সরলার নিকট বিদায় লইয়াছিলেন, সেই দিন হইতে প্রণয় কাহাকে বলে সরলা বুঝিল, চিন্তা কাহাকে বলে বুঝিল । সরলা এখনও পাবের ন্যায় স্নেহময়ী কন্যা, কিন্তু এক্ষণে মাতার সেবা-শুশ্রুষা করিতে করিতে সততই আর এক জনের কথা হৃদয়ে জাগরিত হইত, আর একখানি মখ মনে পড়িত। এখনও সরলা পাবের ন্যায় পরিশ্রম করিত কিন্তু কায্য করিতে করিতে মধ্যে মধ্যে দীঘনিঃশ্বাস পরিত্যাগ করিত, মধ্যে মধ্যে সহসা চক্ষে জল আসিত। লডজায় আশ্রম মুছিয়া আবার কায্যে নিযুক্ত হইত, আবার ধীরে ধীরে চক্ষে জল আসিত। ক্রমে ক্রমে ধীরে ধীরে সেই জলে চক্ষদ্বীয় পরিপণ হইত, ক্রমে ক্রমে ধীরে ধীরে সেই জলে মুখখানি সিক্ত হইত। চিন্তা কি ? সরলাকে জিজ্ঞাসা করিলে তাহার উত্তর দিতে পারিত না-কিন্তু আমরা অনুভব করিতে পারি। রন্দ্রপরে পর্ণেচন্দ্রালোকে যে দেবমাত্তি দেখিয়াছিলাম আবার কি সে মত্তি দেখিতে পাইব ? যাঁহার কণ্ঠে লীলাক্রমে মালা দিতাম, তাঁহাকে কি আবার দেখিতে পাইব ? যুদ্ধ হইতে ইন্দ্রনাথ আবার কি ফিরিয়া আসিবেন ? এই চিন্তা করিতে করিতে সরলা কাৰ্য্য কম ভুলিয়া যাইত, চারিদিক শান্য দেখিত। জ্ঞানচক্ষে সেই রন্দ্রপরের কুটনীর দেখিতে পাইত, সেই কুটীরের পাশ্বে সেই উদ্যান, সে উদ্যানে সেই পাপচারা, উপরে পণচন্দ্ৰ—সেই পতপচারার মধ্যে সেই চন্দ্রালোকে সেই হৃদয়ের ইন্দ্রনাথ, সহসা নয়নজলে সরলার মুখখানি প্লাবিত হইয়া যাইত । মন্দিরবাসীদিগের মধ্যে একজন মাত্র সরলার মনের ভাব বুঝিয়াছিল। কমলা সরলাকে কখন কখন আপনার সঙ্গে নিস্তব্ধ নদীকালে অথবা সন্নিগ্ধ ছায়াবত ব্যক্ষতলে লইয়া যাইতেন, এবং আপনার চিন্তার ভাগিনী করিতেন, সরলার চক্ষের জল মছাইয়া দিতেন, ভগিনীর ন্যায় ভালবাসিতেন। সরলা কমলার গল্প শুনিতে শুনিতে আপন দুঃখ ভুলিয়া যাইত, কমলার মুখের দিকে চাহিয়া চাহিয়া আপন দুঃখ দরে করিত। যেরপে জনশন্যে স্থানে যাইতে তাহার ভয় করিত, চিন্তাশীলা কমলার সঙ্গে সে সকল স্থানেও যাইত, যেরপে গভীর ভাবময় চিন্তা তাহার বালিকাহদয়ে কখন স্থান পায় নাই, ভাবিনী কমলার নিকট তাহাও শনিত। ফলতঃ দুইজনে একত্র হইলে কমলা আপনার হৃদয়ের কবাট উন্মুক্ত করিয়া বালিকার নিকট নানারপে গল্প করিতেন ও অন্তরের নানারাপ ভাব প্রকাশ করিতেন। সরলা বালিকার মত এক মনে সেই সমুদয় শানিত, সে ভাব তাহার বড় ভাল লাগিত, সে হৃদয়গ্রাহী কথা শুনিতে শুনিতে আপন দুঃখকথা বিস্মত হইত। * আজি সন্ধ্যার সময় তাঁহারা দুই জনে নদীতীরে বসিয়া আছেন। 88