পাতা:রাজা প্রজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথ ও পাথেয় । )\ON) বাহিরে আমাদের উপরে চাপিয়া আছে--ঐটেকেই যে কোনোপ্রকারে হোক টান মারিয়া ফেলিলেই পর মুহূর্তে আমরা হাল্কা হইব। এত সহজ নহে ! ইংরেজগবর্মেণ্ট, আমাদের পরাধীনতা নয় তাহা আমাদের গভীরতর পরাধীনতার প্রমাণমাত্র। কিন্তু গভীরতর কারণগুলির কথাকে আমল দিবার মত অবকাশ ও মনের ভাব আজকাল আমাদের নাই । ভারতবর্ষে এত জাতিবিভাগসত্ত্বেও কেমন করিয়া এক মহাজাতি হইয়া স্বরাজ প্রতিষ্ঠা করিব এই প্রশ্ন যখন উঠে তখন আমাদের মধ্যে যাহারা বিশেষ ত্বরান্বিত র্তাহারা এই বলিয়া কথাটা সংক্ষেপে উড়াইয়া দেন যে, সুইজরল্যাণ্ডেও ত একাধিক জাতির সমাবেশ হইয়াছে কিন্তু সেখানে কি তাহাতে স্বরাজের বাধা ঘটিয়াছে ? এমনতর নজির দেখাইয়া আমরা নিজেদের ভুলাইতে পারি কিন্তু বিধাতার চোখে ধূলা দিতে পারিব না ; বস্তুত জাতির বৈচিত্র্য থাকিলেও স্বরাজ চলিতে পারে কিনা সেটা আসল তর্ক নহে। বৈচিত্র্য ত নানাপ্রকারে থাকে—যে পরিবারে দশজন মানুষ আছে সেখানে ত দশটা বৈচিত্র্য । কিন্তু আসল কথা সেই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের তত্ত্ব কাজ করিতেছে কিনা। সুইজলাগু যদি নানাজাতিকে লইয়াই এক হইয়া থাকে তবে ইহাই বুঝিতে হইবে সেখানে নানাত্বকে অতিক্রম করিয়াও একত্ব কৰ্ত্ত হইয়া উঠিতে পারিয়াছে। সেখানকার সমাজে এমন একটি ঐক্যধৰ্ম্ম আছে। আমাদের দেশে বৈচিত্র্যই আছে কিন্তু ঐক্যধর্মের অভাবে বিশ্লিষ্টতাই ভাষা, জাতি, ধৰ্ম্ম, সমাজে ও লোকাচারে নানাবিধ আকার ধারণ করিয়াএই বৃহৎ দেশকে ছোট বড় বহুতর ভাগে বিভাগে শতধাবিচ্ছিন্ন করিয়া রাখিয়াছে। অতএব নজির পাড়িয়া ত নিশ্চিন্ত হইবার কিছু দেখিনা । চক্ষু বুজিয়া একথা বলিলে ধৰ্ম্ম শুনিবেন যে আমাদের আর সমস্তই ঠিক হইয়া গিয়াছে এখন কেবল ইংরেজকে কোনো মতে বাদ দিতে পারিলেই