পাতা:রাজা প্রজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"bア রাজা প্রজা । দেশনায়কতা সেনানায়কতার অধিকার আমরা হারাই নাই ;—মুসলমান সমাট যখন সভাস্থলে সামন্তরাজগণকে পার্শ্বে লইয়া বসিতেন, তখন তাহা শূন্যগর্ভ প্রহসনমাত্র ছিল না। যথার্থই রাজারা সম্রাটের সহায় ছিলেন, রক্ষী ছিলেন, সন্মানভাজন ছিলেন । আজ রাজাদের সন্মান মৌখিক, অথচ তাহাদিগকে পশ্চাতে টানিয়া লইয়া দেশে-বিদেশে রাজভক্তির অভিনয় ও আড়ম্বর তখনকার চেয়ে চার গুণ । যখন ইংলণ্ডের সামাজ্যলক্ষ্মী সাজ পরিতে বসেন, তখন কলনিগুলির সামান্ত শাসনকৰ্ত্তারা মাথার মুকুটে ঝলমল করেন ; আর ভারতবর্যের প্রাচীনবংশীয় রাজগণ র্তাহার চরণমুপুরে কিঙ্কিণীর মত আবদ্ধ হইয়া কেবল ঝঙ্কার দিবার কাজ করিতে থাকেন –এবারকার বিলাতী দরবারে তাহা বিশ্বজগতের কাছে জারি হইয়াছে ! ইংরেজের সামাজ্যজগন্নাথজীর মন্দিরে, যেখানে কানাডা, নিউজিল্যাণ্ড, অষ্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা कौल डेमद्र ७ পরিপুষ্ট দেহ লইয়া দিব্য হাক ডাক্‌ সহকারে পাণ্ডাগিরি করিয়া বেড়াইতেছে, সেখানে কৃশ জীর্ণতনু ভারতবর্ষের কোথাও প্রবেশাধিকার নাই—ঠাকুরের ভোগও তাহার কপালে অল্পই জোটে—কিন্তু যে দিন বিশ্বজগতের রাজপথে ঠাকুরের অভ্ৰভেদী রথ বাহির হয়, সেই একটা দিন রথের দড়া ধরিয়া টানিবার জন্ত ভারতবর্ষের ডাক পড়ে। সেদিন কত বাহবা, কত করতালি, কত সৌহার্দ্য—সেদিন কার্জনের নিষেধশৃঙ্খলমুক্ত ভারতবর্ষীয় রাজাদের মণিমাণিক্য লওনের রাজপথে ঝলমল করিতে থাকে এবং লওনের হাসপাতালগুলির পরে রাজভক্ত রাজাদের মুষলধারে বদান্ততাবৃষ্টির বার্তা ভারতবর্ষ নতশিরে নীরবে শ্রবণ করে । এই ব্যাপারের সমস্তটা পাশ্চাত্য অত্যুক্তি। ইহা মেকি অত্যুক্তি—খাটি নহে ! প্রাচ্যদিগের অত্যুক্তি ও আতিশয্য অনেক সময়েই তাহীদের স্বভাবের ঔদার্য্য হইতেই ঘটয়া থাকে। পাশ্চাত্য অত্যুক্তি সাজানে।