জনার্দ্দন। হুজুর সর্বজ্ঞ, আমাদের অভিযোগ—
জীবানন্দ। কি অভিযোগ?
জনার্দ্দন। আমরা গ্রামস্থ ধোল-আনা, ইতর-ভদ্র একত্র হয়ে—
জীবানন্দ। (একটু হাসিলেন) ত দেখতে পাচ্ছি। (অঙ্গুলি-নির্দেশ করিয়া) ওইটি কি সেই ভৈরবীর বাপ তারাদাস ঠাকুর নয়?
শিরোমণি। (সবিনয়ে) রাজার কাছে প্রজা সন্তান-তুল্য, তা সে দোষ করলেও সন্তান, না করলেও সন্তান। আর কথাটা একরকম ওরই। ওর কন্যা ষোড়শীকে আমরা নিশ্চয় স্থির করেচি, তাকে আর মহাদেবীর ভৈরবী রাখা যেতে পারে না। আমার নিবেদন, হুজুর তাকে সেবায়েতের কাজ থেকে অব্যাহতি দেবার আদেশ করুন।
জীবানন্দ। (চকিত) কেন? তার অপরাধ?
দু'তিনজন ব্যক্তি। (সমস্বরে) অপরাধ অতিশয় গুরুতর।
জীবানন্দ। তিনি হঠাৎ এমন কি ভয়ানক দোষ করেচেন রায়মশায়, যার জন্য তাকে তাড়ানো আবশ্যক?
জীবানন্দ। না, না, উনি অনেক পরিশ্রম করেচেন, বুড়ো মানুষকে আর কষ্ট দিয়ে কাজ নেই, ব্যাপারটা আপনিই ব্যক্ত করুন।
জনার্দ্দন। (চোখে ও মুখে দ্বিধা ও সঙ্কোচের ভাব আনিয়া) ব্রাহ্মণকন্যা—এ অদেশ আমাকে করবেন না।
জীবানন্দ। গো-ব্রহ্মণে আপনার অচল ভক্তির কথা এদিকে কারও অবিদিত নেই। কিন্তু এতগুলি ইতর-ভদ্রকে নিয়ে আপনি নিজে যখন উঠে-পড়ে লেগেচেন, তখন ব্যাপার যে অতিশয় গুরুতর তা আমার বিশ্বাস হয়েচে। কিন্তু সেটা আপনার মুখ থেকেই শুনতে চাই।
জনার্দ্দল। (শিরোমণির প্রতি ক্রুদ্ধ দৃষ্টি হানিয়া) হুজুর যখন নিজে শুনতে চাচ্ছেন তখন আর ভয় কি ঠাকুর? নির্ভয়ে জানিয়ে দিন না!
শিরোমণি। (ব্যস্ত হইয়া) সত্যি কথায় ভয় কিসের জনাৰ্দন? তারাদাসের মেয়েকে আর আমরা কেউ রাখব না হুজুর। তার স্বভাব-চরিত্র ভারি মন্দ হয়ে গেছে—এই আপনাকে আমরা জানিয়ে দিচ্ছি।