৭২ সাহিত্য-মীমাংসা বীর প্রভৃতি রসাস্তরের স্থলেও অনুরূপ বাধ-জ্ঞানের অভাব থাকিলেই নায়কনায়িক সামাজিকের রসাতুভূতির বিভাব হইতে পারে। অন্যথা নহে। দুৰ্যোধনের উরুভঙ্গ দেখিয়া কোনও সহৃদয় দর্শকের চিত্তে করুণরসের উদ্রেক হয় না, কারণ পূর্ব হইতেই তাহার চিত্ত দুৰ্যোধনের প্রতি বিরূপ হইয়া আছে। এইরূপ পাপিষ্ঠ কিরূপে আমাদের শোকভাজন হইতে পারে; ঈদশ দুষ্কর্যকারীর জন্য শোক করা নীতিবিরুদ্ধ—এইরূপ একটি সংস্কার সামাজিকের চিত্তে দৃঢ়মূলভাবে রোপিত থাকে, সেইজন্য দুর্যোধন কখনও প্রকৃত সহৃদয়ের করুণরসামুভূতির অালম্বন হইতে পারেই না। সেইরূপ, নায়কে কাপুরুষত্বজ্ঞান বীররসের প্রতিবন্ধক । শুঙ্গারের বিভাব অগম্য হইবে না’, ‘করুণের বিভাব অশোচ্য হইবে না’, ‘বীররসের বিভাব কাপুরুষ হইবে না। এইভাবে প্রত্যেক রসের বিভাবের পক্ষে কতকগুলি নেতিমূলক জ্ঞান ( negative judgments ) অবশ্যই থাকিতে হইবে । কিন্তু এই স্থলে জিজ্ঞাস্য : ভগিনীর স্থলে কাস্তাবুদ্ধি যেমন ইনি অগম্যা’ এইরূপ সংস্কারপ্রস্থত বাধজ্ঞানের ফলে জন্মলাভ করিতে পাবে না, শকুন্তলার স্থলেই বা কি জন্য ঐ রূপ বাধজ্ঞান কাস্তাবুদ্ধির প্রতিবন্ধক হইয়া দাড়ায় না ? শকুন্তলার প্রতি, সীতার প্রতি প্রতিও তো তুল্যভাবে নীতিবিরুদ্ধ ? অনেকে বলিবেন : সঙ্গদয় আপনাকে দুৰ্য্যন্ত প্রভৃতি নায়কের সহিত অভিন্ন বলিয়া মনে করে, সুতরাং শকুন্তলার প্রতি, কিংবা সীতাদেবীর প্রতি তাহার প্রণয়মূলক আসক্তি বা রতি লৌকিক নিষেধবুদ্ধির দ্বারা বাধিত হইতে পারে না। কিন্তু এই স্থলে জিজ্ঞাস্য : আমি হইতে পারে, কোনও বাধাই নাই। দক্ষিণাত্যের দ্রাবিড়সমাজে মাতুলস্থতার পরিণয় প্রশস্ত বগিয়। বিবেচিত, স্বতরাং পিতৃত্বসার পুত্র ও মাতুলের পুত্রীকে নারকনারিকারূপ কল্পনা করিয়া যেখানে মাটক রচিত হইয়াছে, সেখানে এবিড়দেশীয় সহৃদরের শৃঙ্গারানুভূতির পক্ষে কোনও বিশ্লষ্ট ষে ঘটিৰে না—তাগ বলাট বাহুল্য। স্বমাতুলস্থতা প্রাপ্য দাক্ষিণাত্যস্ত নৃত্যুতি । লৌকিক আচার ব্যবহার ও নীতিবোৰ যে আমাদের সাহিত্যিক রসামুভূতির উপর কতখানি প্রভাব বিস্তাৱ করিতে পারে, ইহার দ্বারা তাক স্বনায়রপে প্রমাণিত হয় ।