পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯৮ তাহার চেষ্টায় বাধা দিয়া বিজন ব্যাকুল স্বরে আবার বলিল—“উঠে না, উঠে না,—রক্তে যে সব ভেসে গেল,—নিবারণ করব কি ক’রে ? কি উপায় ! ডাক্তার ? কোথায় গেলে তুমি ? এস এস,— বাচাও, বাচাও, মেরেছি আমি,—আমাদের দুজনেরই যে প্রাণ হ’তে প্রিয়, নিষ্ঠুর পিশাচের মত আমি তাকে মেরেছি ; দেবতার মত তুমি এসে তাকে প্রাণ দান কর । হায় ! কি করলেম, এ কি হোল ?” রাজকন্ত। এবার চোখ খুলিয়। সজ্ঞান ধীর দৃষ্টিতে তাহাকে দেখিয়া বলিলেন, “তুমি বিজন দা ! দুঃখ কেন ভাই! বেশ করেছ তুমি ! আমি ভাবছিলুম, তোমার কাছে মুক্তি ভিক্ষা নেব । তুমি আমার লে প্রার্থনা না জেনে, না শুনে অযাচিতভাবেই নিজে এসে আমাকে মুক্তি দিলে, আমি অস্তরের সঙ্গেই তোমাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি।” “ধন্যবাদ ! ঠাট্টা—উপহাস ? বল বল, যা তোমার প্রাণ চায়, তাষ্ট বল । হায় হায় ! এর চেয়ে যদি আমার বুকে ছুরি বসিয়ে দিতে ? তা ত পারবে না তুমি,-তুমি যে দেবা--আর আমি যে পিশাচ । যে হাতে তোমাকে মেরেছি, সেই হাতে নিজের বুকে ছুরি বসিয়ে এ পাপের প্রায়শ্চিন্ত করব ——যদি প্রায়শ্চিত্ত হয় তাতে " বলিতে বলিতে সি জন উঠিয়া দাড়াষ্টয়া চকিত হস্তে বুকের পকেট হইতে পিস্তল বাহির করিল। রাজকন্ত মুমুধু অবস্থাতেও আদেশব্যঞ্জক ধাবস্বরে কহিলেন—“থামো বিজনদা, থামো !” বিজনের হাত নামিয়া পড়িল । "পিস্তল ফেলে দাও, দুরে নদীর জলে ।” বিজন পিস্তল ছুড়িয়া দূরে ফেলিয়া দিল । রাজকন্ত। অতঃপর আদেশ করিলেন--- “বসো অ1মার পাশে ।” সে মুড়ের ন্তায় তাহার পাশে বসিল, পুৰ্ব্বের ন্যান্থ রক্ত থামাইবার ইচ্ছার বাহুমূলে কাপড় চাপিয়৷ ধরিল । রাজকন্যা বলিলেন—“আমার একটি অমুরোধ আছে বিজনদী -”

  • বল বল কি অনুরোধ ? আগুনে যদি ঝাপ দিতে বল ত পতিপ্রাণী সতীর মত প্রফুল্ল মুখে চিতভস্ম হব।”
  • ন বিজনদা, আমি তোমার মৃতু্য চাইনে ; বাঁচতে হবে তোমাকে,—আমি তোমার জীবন ভিক্ষা করছি—কাজ আছে আমার-- *

"আমাকে বাচতে বলছ তুমি-পলে পলে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা এ হতভাগ্যের প্রতি ! তাই যদি স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী তোমার উচ্চা হয় ত তাই হোক। এ ঘৃণ্য জীবন তোমার কি কাজে লাগবে বল ?” রাজকন্ত মৃদুস্বরে বলিলেন, “পাপ থেকেও ভগবান পুণ্য ফুটিয়ে তোলেন,—তোমরা যে পথে চলেছ, সে পথ যে মুক্তির পথ নয়—” “যুঝেছি রাজকন্ত, তা বুঝেছি, সৰ্ব্বস্ব খুইয়ে—সে সত্য বুঝেছি।” “কিন্তু নিজে বুঝলেই ত চলবে না, পরহিতার্থে এই সত্য তোমাকে প্রচার করতে হবে । মহৎ না হয়ে যে মহৎ কার্য্য সাধিত করা যায় না ; যে গুরুর কাছে তোমরা বিপরীত শিক্ষা পেয়েছ, তাকেও এই সত্য বোঝাতে চেষ্টা কর । যাও, তুমি যাও, কেউ এখানে আসার আগেই তুমি চলে যাও—এই আমার প্রাণান্তিক অনুরোধ।” রাজকন্ত। আবার নিজাব ভাব ধারণ করিলেন । তাহাকে কথা কহিতে দেখিয়া বিজন কথঞ্চিৎ আশান্বিত হইয়া উঠিয়াছিল- এই নীরবতায় আবার উদ্বেগপুর্ণ চিত্তে উন্মাদের মত কহিল— “যাচ্ছি আমি, এখনই যাচ্ছি,---তোমার আদেশ জগতের সর্বত্র প্রচার করতে যাচ্ছি,—একটু অপেক্ষ কর, ডাক্তার আমন, দেখে যাই,-ৰ্তার হাতে তোমাকে সাপে দিয়ে ঘাই ; তিনি বাচিয়ে তুলুন তোমাকে , আমি চ’লে ঘাই, ঐ যে-ঐ---ঐ ৬ক্তির ! এস, এস, শীগগির-উ, এত দেরী ।” অদূরে ডাক্তারের মূৰ্ত্তিছীয় পরিদৃষ্ট হইল। অষ্টাত্রিংশ পরিচ্ছেদ শরৎকুমার রাজকন্যার নিকট হইতে আসিয়া দেখিলেন, রাজা একাকী বারাণায় বিচরণ করিতেছেন—নবাগত অতিথি তখন সন্ধ্য উপাসনার জন্য ভজন-গৃহে গিয়াছিলেন। শরৎকুমারকে আসিতে দেগিয়াই অগ্রসর হইয় দাড়াষ্টয়া সানন্দে তিনি বলিয়া উঠিলেন, “এই যে ডাক্তার, এস এস * শরৎকুমারও প্রফুল্লমুখে নিকটে আসিয়া মুক্তিপত্রথান তাহায় হাতে দিয়া চরণ-স্পর্শপুৰ্ব্বক প্ৰণিপাত করিলেন। পরোয়ানাথান পাশের চৌকিটার উপর ফেলিয়া, দুই হন্তে অনিত শরৎকুমারকে তুলিয়া রাজা তাহাকে আলিঙ্গনপাশে বদ্ধ করিলেন । কিন্তু কোলাকুলিতেও তাহার সাদর-অভ্যর্থনা শেষ হইল না । অতঃপর তাহার পিঠ থাবড়াইয়া, আর্দ্রস্বরে পিতৃ-হৃদরের পরিপূর্ণ খেহ প্রকাশ করিয়া বলিলেন