পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বপ্নবাণী ভাকিয়া কছিলেন,“পণ্ডিত মহাশয়ের পাখীটাব অমুখ করেছে—তুমি ত হরিরাম এক জন শিকারী, পাপীর চিকিৎস জণন বোধ হয় ?” হরিরাম মাথা নাড়িয়া বলিল,—“উছ ; আমি জানিনে ; হাতেম মিঞা জানে । সে অামার বাড়ীর কাছেই থাকে।” জ্যোতিৰ্ম্ময়ী সামুনয়ে কহিলেন, “ষাও হরিরাম, এখনি তাকে নিয়ে গিয়ে পণ্ডিত মশায়ের পাখীটিকে দেখাও। ব’লে সারাতে পারলে খুব বকৃসিস্ পাবে।” হরিরাম যে আজ্ঞা' বলিয়া অভিবাদনপূৰ্ব্বক ঘুটি বাজাইতে ৰাজাইতে চলিয়া গেল । অপরাহ্লে যথাসময়ে নিমন্ত্রিত বালকগণ আম বাগানে আসিয়া সমবেত হইল । জ্যোতিৰ্ম্ময়ী স্বয়ং তাহাদিগকে রার্থী পরাইবেন, তাহদের আনন্দউৎসাহ দেখে কে ? বন্দে মাতরম্ ধ্বনি তুলিয়া তাহারা প্রবেশ করিল ; বন্দে মাতরম্ ধ্বনিতে রাখী পরিয়া অfনত-মস্তকে তাহাকে নমস্কার অভিবাদন করিল। জ্যোতিৰ্ম্মন্ধীর জীবন মাতৃভাবে সার্থক হইয়া উঠিল । তিনি রাখীবন্ধন শেষে প্রত্যভিবাদনে আর একবার তাহাদিগকে নমস্কার করিয়া কহিলেন, “আজকের রাখীবন্ধন-উৎসব আমীদের ব্যায়াম উৎসবেরই একটি অঙ্গ। সমিতির প্রতিষ্ঠা দিনের শপথ তোমাদের মনে আছে ত?” ইছার উত্তরে বহু কণ্ঠ একই কণ্ঠের মত ধ্বনিত হইয়া উঠিল—“মনে নেই সে শপথবাক্য! কি বলেন রাজকুমারি ?” সকলে থামিলে, বসন্তকুমার নামে সমিতির এক জন তেজস্বী বলবান যুবক উত্তর করিল, “দেশের কাজে যদি কোন দিন এই বtহুবল সার্থক করতে পারি, তবেই সে শপথ ভোলীর দিন আসবে ; তার আগে নয়।” রাজকুমারী নীরব হইয়া পড়িলেন, বসন্তকুমীরের এ কথার অর্থ তিনি ঠিক হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিলেন না । কিছু পরে ধীরে ধীরে বলিলেন, “বাহুবলের সার্থকতাই ত আমাদের কার্য্যের উদ্দেগু নয়— ৰসন্ত ; আমাদের পথ ত অত্যাচারের পথ নয়। অfমাদের জীবনের সার্থকতা, কার্য্যের সফলতা আত্মপাতে ; রক্তপাতকে কখনো যেন আমরা গৌরবের কার্য্য ক’লে বিবেচনা না করি ।” সহসা সুপ্তিভঙ্গে অতিথির দল যেন চমকিয়া উঠিল । ব্যায়াম-সমিতি-প্রতিষ্ঠার দিনে তাহার কি শপথ কল্পিয়াছিল, তক্ষরে অক্ষরে তাহ! কাহারে স্মরণ ছিল না, দেশের জন্ত কাজ করিতে তাহার শপথবদ্ধ—এই কথাই মাত্র তাহাদের মনে জাগরূক ७झै-२२ ᎼᏬᎼ ছিল। অনাদি কেবল প্রাতঃকালে তাহার বিস্তৃত স্মৃতি পূর্ণমাত্রায় ফিরিয়া পাইয়াছে। অন্য কেহ কোন কথা কহিবার পুৰ্ব্বেই সে জ্যোতিৰ্ম্ময়ীর নিকটে অসিয়া নতমস্তকে বলিল, “যখাদেশ রাজকুমারী ; রক্তপাতকে অবজ্ঞা করিয়াই আমরা চলিব।" “কিন্তু যদি আবগুক হয় !" একটি ক্ষীণদেহ অল্পবয়স্ক বালক পশ্চাৎ হইত্তে এই প্রশ্ন করিল। জ্যোতিৰ্ম্মল্পী উত্তরে কছিলেন, “আত্মরক্ষার জন্ত, দুৰ্ব্বলরক্ষার জন্য বাহুবলের অtশ্রয় গ্ৰহণ ত অনিবাৰ্য্য,---কিন্তু—* রাজকুমারী এই পর্যন্ত বলিয়া সহসা খামিয়। গেলেন—অনাদি র্তাহার প্রতিনিধিস্বরূপ কহিল, “কিন্তু রক্তপাতে দেশব্ৰত-উদ্‌যাপন-সঙ্কল্প আমাদের মনে যেন না জাগে । রাজকুমারী এই কথাই ব’লছেন আয় এই ভাবের শপথেই আমরা পূৰ্ব্ব হ’তে নিজেদের আবদ্ধ করেছি। "অযথা বলপ্রকাশ বা দ্বন্দ্ব করিবে না। ইহা অামাদের নিয়মাবলীর একটি সুত্র।” সকলেরই মনে স্বত স্মৃতি পুনর্জাগরিত হইয়। উঠিল,ব্যায়াম-সমিতি-প্রতিষ্ঠাদিনের আনন্দ উচ্ছ্বাসের কথা মনে পড়িল,— উৎসাহ ভাবে নীয়মান হইয়। সম্মুখের বালকশ্রেণী অবনত-মস্তকে বলিল, “আমরা রাজকুমারীকে গুরু বলিয়া জানি, গুরু বলিয়া মানি, তাহার আদেশ সৰ্ব্বসময়েই শিরোধাৰ্য্য ।” এই বলিয়া বন্দে মাতরম্ ধ্বনিতে তাহারা জয়ধ্বনি তুলিল, পশ্চাতের দুই চারি জন বালকের নীরবত সেই জয়ধ্বনির মধ্যে কেহ লক্ষ্য করিল না । ইহার পর বালকগণ আনন্দ কোলাহল করিতে করিতে ভোজের দিকে মনোনিবেশ করিল । যখন বিহঙ্গ বৈতালিকগণ সন্ধ্যাবন্দনায় কানন মুখরিত করিয়া তুলিল, পান-ভোজনাদি শেষ করিয়া বালকগণও তখন বন্দে মাতরম্ গীতে আগমনী গাহিল । বন্দনাগীতি-স্বাগত সন্ধ্যারাণী, শান্তিময়ী আশিসালোকে ভুবন ভরাইয়া তুলিয়া ধরণীতে পদার্পণ করিলেন । এই কল্যাণরূপিণী জননীর স্নেহ-ক্রোড়ে রাজকুমারীকে সংরক্ষিত করিয়া বালকগণ প্রসন্নমনে বিদায় গ্রহণ করিল। সন্ধ্যা বহুক্ষণ উত্তীর্ণ হইয়া গিয়াছে। জনশূন্ত কানন-তলে লোহাসনে আসীন রাজকন্যা আকাশের দিকে চাহিয়া চিন্তামগ্ন। সন্ধ্যা পুৰ্ব্ব হইতে দ্বিতীয়ার চন্দ্রকলা দিব্যরূপে আত্মপ্রকাশ করিয়া এখন অtষ্মগোপন প্রয়াসে আকাশের শেষপ্রাস্তে প্রায় নামিয়া