বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্রি আতিথ্যরক্ষার জন্তই প্রধানতঃ তিনি অল্পস্বল্প সিগারেট থাইতেন । শ্যামাচরণ র্তাহার অঙ্গুলি-ধুত সিগারেট পুনরায় ওষ্ঠাগ্রে লইয়া সঞ্জীবনী দুই এক টানেই তাহাকে দিব্য জলন্তরূপ প্রদান করিয়া, বাজা বাহাদুরের উত্তরে কহিলেন,—“আপাতত: কেন ?—কোন কালেই চলে নি । মুরগণ চিরদিনই অস্থর-বলের নিকট হার মেনেছেন ; আর দেবভাব ত্যাগ ক’বে অসুরভাব অবলম্বন করেই ছলে বলে কৌশলে শেষে আত্মরক্ষায় সমর্থ হয়েছেন। ধৰ্ম্ম চিরদিনই, রাজা বাহান্তর, অধৰ্ম্মের সহরিত ক'রে আসছে !” রাজা দীর্ঘনিশ্বাস সহকারে বলিলেন,—“বুঝেছি, গাঙ্গুলি মশায়-আপনি বা বলছেন, তা ঠিক । তবুও সেই তুর্লভ দেবভাবের অণকীক্ষাতেই মন চঞ্চল, ব্যথিত হয়ে ওঠে। সত্যই কি সংসার চিরদিনই পশুবলের উপরই স্থাপিত থাকৃবে ? এমন এক দিন কি আদিবে না-যে দিন দ্যায়, মঙ্গল, সত্যকে আমরা জগতের একচ্ছত্র অধিপতি দেখতে পাব ?” “আপনার অণক ক্ষীর সঙ্গে জগতেরও অক্ষিণ ক্ষে যদি কোন দিন এক হয়, তবে অবশুষ্ট সে দিন কোন সময়ে আসবে। কিন্তু এখনও ত তার কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না-না স্বদেশে, না বিদেশে, কোথাও ত ধৰ্ম্মের যথার্থ সম্মান দেখতে পাইনে। এই দেখুন না -আমাদের স্বদেশী ছেলেদেরই কাণ্ডকারখানা। সাধু উদেশ্বকেও অসাধুতার মোচণ্ডে তার কিরূপ বিকৃত ক’বে তুলছে ” রাজা ব্যথিতচিত্তে মৃদু দীঘনিশ্বাস ত্যাগ করিলেন গ্র্যামাচরণ আবার কহিলেন, - “আমার কি বিশ্বাস জানেন রাজা বাহাদুর ? প্রসাদপুরেব এষ্ট অস্ত্রচুরী--তথাকথিত স্বদেশী ছেলেদেরই কও ; এবং খুব সম্ভব মাণিকতলীদলের সঙ্গে এদেরও একটা যোগাযোগ অাছে।" বেদনার একটা বিছংশিখ রাজার লক্ষ হইতে উঠিয়া মস্তক ভেদ করিয়া চলিয়া গেল । তিনি চৌকি হইতে উঠিয় বারান্দায় প!-চালি করিতে আরম্ভ করিলেন ; ছ' একবার পরিক্রমণের পর রেলিংএর নিকট অসিয়া দাড়াইলেন । লারান্দার ছবির ঘড়িতে সুমধুর বাদ্যযন্ত্র বাজিয়া সময় নির্দেশ করিয়া জানাইল, এখন অপরাহু তিন ঘটিকা । গেটের বড় ঘড়িতে ও ঢং ঢং ঢং করির সজোরে তিনটা বাজিয়া উঠিল । রাজা দুইটার সময় বিচারকার্য্য শেষ করিয়া আসিয়া এক ঘণ্টকাল মাত্র এখানে মুখগল্পে সময় অতিবাহিত করিয়াছেন । বাগানের

  • >

মলী আসিয়া ঝরণযন্ত্রে চাবি লীগাইয দিয়া গেল , শতধারে জলরাশি উৎক্ষিপ্ত, প্রক্ষিপ্ত হইয়া উঠিয়া কাননে নব-মাধুরী ফুটাইয়া তুলিল ; প্রস্তরমূৰ্ত্তি দুইটিও কি এক বিচিত্র আভায রঞ্জিত হইয়া সহসা যেন হাসিয়া উঠিল। রাজা অfনমনে সেই দিকে চাচিয়া, কতক্ষণ পরে শুীমাচরণের কথার উত্তরে - স্বগত ভাবেই আস্তে অস্তে কহিলেন,- “তা নাও হ'তে পারে।” শ্যামাচরণও একটু অগেষ্ট রাজার পাশে আসিয়া দীড়াইয়াছিলেন । তিনি এ কথায় কোন উত্তর করিবার পূৰ্ব্বে প্রথমতঃ তাহার প্রায় নিঃশেধিত চুরুটটিকে চরম টানে মরণ দশায় অমিয়া ফেলিয়া সবল নিক্ষেপে বাগানের মাটীতে সমাধিলান করিলেন । তাহার পর টেবিলের কাছে আসিয়া পূর্ণাবয়ব আর একটিকে তৎস্থলাভিষিক্ত করিয়া লইয়া পুনরায় বাজার পা-বৰ্ত্তী হইয়া কহিলেন,—“আপনি কি মনে ক’রে এ কথা বলেন -তা ত ঠিক বুঝতে পারছিনে, রাজা বাহাদুর ” রাজ। ফিরিয়া দাড়াইয়া তাঙ্গার মল্যবান জামিয়ারখানার স্খলিত লুণ্ঠিত অঞ্চল স্কন্ধে তুলিয়। লইয়া কহিলেন,–“বসবেন, চলুন বলছি।" নবম পরিচ্ছেদ প্রসাদপুরে কনফারেন্স গুইয়। বাইবার অল্পদিন পরেই মাণিকতলীর বিদ্রোঙ্গ-চক্রান্ত প্রকাশিত হইয়। পড়ে, বিদ্রোহিদলভুক্ত অনেক ছেলেকেই প্লাজা চিনিতেন। দেশের কার্য্যে উৎসর্গীকৃত তাঁহাদের জীবন এক দিন সে সুসিদ্ধিতে ধন্য হইয়া উঠিবে, এই আশাদিশ্বাসেই তিনি ভরপুর ছিলেন । যখন শুনিলেন, দেশমাতlর এই সুসস্তানগণ বিলাতী আদর্শে অধৰ্ম্মের পথে চলিয়। তাঙ্গদের সাধু উদ্দেগুপুর্ণ জীবন বিকৃত, ব্যর্থ করিয়া ফেলিয়াছে, তখন তাহার কষ্টের সীম। রহিল না । তfহার মনে হইল—স্বয়ং বিলাতপুরুষ এ দেশের প্রতি যখন বিমুখ, তখন এই অভি শপ্ত দেশের ভাগ্যপরিবর্তনের অণশ দুরাশ মাএ । সঙ্গে সঙ্গে দুঃখ-করুণার তাহার ঈদয় ভবিয়া উঠিল । এই হতভাগ্য লাস্ত দেশসেবকদিগের মুক্তির অভিপ্রায়ে র্যাহারা গোপনে অর্থ-সাহায্য করিয়াছিলেন, অতুলেশ্বর তাহদের মধ্যে অগ্রণী । হামাচরণের সন্দেহবাক্য তাঙ্গর অসম্ভব বলিয়া মনে হইল না, কিন্তু প্ৰসাদপুরে ও যে এই ঘোর ব্যাধি সংক্রামিত