বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্রি অবয়ব একেবারেই ঢাকা। দীনেশ এখানে আসিয়া প্রথমে ভক্তিভরে সেই প্রস্তরপুঞ্জকে নমস্কার করিয়া সেই কোণ হইতেই ছুইটী বন্দুক টানিয়া বাহির করিল। তাহা ছাড়া এখানে আর কোন অস্ত্র না পাই। সকলেই মনঃক্ষুণ্ণ হইয়া পড়িলেন। শরৎকুমারের হাতে লণ্ঠন ছিল, অনাদি ও বসন্তকে বন্দুক দুইটা দিয়া দীনেশ বলিল, “ও ঘরের মেঝেট একবার খুড়ে দেখা যাক, মাটর মধ্যেই হাতিয়ারগুলা রাখা হয়।” একটা সাবল ও দুইখানা কোদাল সেই ঘর হইতেই সংগ্ৰহ করিয়া সে অতঃপর সঙ্গীদিগের সহিত পূৰ্ব্বকক্ষে প্রবেশ করিল। বসন্ত ও অনাদি বন্দুকের চওড়া দিকটা প্রথমে কোমরবন্ধে গুজিয়া লইল ; পরে বন্দুক-নলীটা বগলের ফুট পাশ দিয়া বুকের উপরিভাগে কষিয়া বাধিতে লাগিল। দড়ি প্রভৃতি সরঞ্জাম তাহারা পকেটে করিয়া সঙ্গে আনিয়াছিল। শরৎকুমার দীনেশের সহিত তল্পির্দিষ্ট মেঝের জমীর উপর কোন্নালের কোপ বসাইতে লাগিলেন। ঝুরোমাট দুইচার কোপে সহজেই খুলিয়া আসিল, তখন তাহার কোদাল রাখিয়া মাট সরাইতে প্রবৃত্ত হইলেন। সহসা মৃদু মৃদু ধ্বনিতে বঁশি বাজিতে লাগিল। সকলে চমকিয়া উঠিলেন । দীনেশ উঠিয়া দাড়াইয়া কান খাড়া করিয়া পাগলের মত বলিয়া खेशि-“शा३ बाहे–5छ्य श्रागि एक 'रफुम्छ ।” বসন্ত কোমরবন্ধের চামড়াটা জোরে মাটিতে জাটিতে দীনেশকে প্রশ্ন করিল—“কোথায় যাবে ?” অনাদির বন্দুক বাধা তখন শেষ হইয়া গিয়াছিল, সে তাড়াতাড়ি অগ্রসর হইয়া দাড়াইয়৷ ছিদ্রপথে দৃষ্টিপাত পূর্বক, দীনেশ কোন উত্তর করিবার পুৰ্ব্বেই বলিল—“এ কি ব্যাপার! আমরা ভূল করেছি, বসুমিঞা, আজই দেখছি ওদের সেই ডাকাতীর দিন ।” দীনেশ বলিল, “হ্য তুলক্রমের ডাক এ ; এখনি যেতে হবে আমার !" শরৎকুমার দীনেশের সঙ্গে সঙ্গেই উঠিয়া দাড়াইয়াছিলেন, তিনি তাহার পিঠে হাত দিয়া বলিলেন— -দীনেশ, নির্ভয় হও, ডাকতীতে যাবে না তুমি,— ডাকাতী রক্ষ। করব আমরা ।” এই বাক্যে দীনেশের মনের মোহ যেন চকিতে ভাঙ্গিয়া গেল - সে আশ্বস্তভাবে গুরুকে নমস্কার করিয়া দৃঢ়কণ্ঠে কহিল, "আদেশ করুন–কি কবৃব—” "একটু অপেক্ষা কর, বলছি ” বলিয়া তিনি ছিদ্রপথে মুখ বাড়াইয়া দিলেন। সত্যই এ কি ব্যাপার । মনুষ্য না ইহারা প্রেতসৈন্য ? হস্তের خوان টর্চলাইটে, অতি বীভৎস ভীষণরূপে প্রত্যক্ষ হইয়া উঠিয়া কখনও অগ্রে কখনও পশ্চাতে আনুষঙ্গিক, দীর্ঘকায় অদ্ভুত ছায়ামূৰ্ত্তি রচনা করিতে করিতে এই কিন্তুতকিমাকারের দল ঘুরিয়া ফিরিয়া এই দিকেই আসিতেছিল । প্রেতযোনিতে বিশ্বাস না থাকিলেও এ দৃশ্যে শরৎকুমারপ্রমুখ সাহসী পুরুষদিগেরও অঙ্গে একবার কাটা দিয়া উঠিল। কিন্তু মুহূৰ্ত্তমধ্যে সেই সন্ত্রস্তভাব মন হইতে সরাইয়া ফেলিক্স কি কৰ্ত্তব্য স্থির করিবার জন্ত তিন জন একত্র হইয়া দাড়াইলেন । শরৎকুমাব দীনেশকে জিজ্ঞাসা করিলেন—“এর ডাকাতী করতে যাচ্ছে কোথায় জান কি ?” উত্তর হইল—“ঠিক জানি না। তবে মহাজন ধনপতি সিংহের টাকা-বোঝাই গাড়ী হয় ত বা এই পথে আজই যাবে—” বসন্ত ও অনাদি এক সঙ্গে বলিয়া উঠিল—“ঠিক ঠিক, কি মূর্গ আমরা—এইটে সে দিন ধবৃতে পারিনি ।” শরৎকুমার বলিলেন-- “তাতে ক্ষতি হয়নি। আমরা এ ডাকীর্তী নিবারণ করতেই আজি দৈবপ্রেরিত হয়ে এসেছি—বুঝলে ত ? এস এস ঐ মুথোসগুলো নামিয়ে ফেলা যাক্ ।” যেমন কথা-অমনিই কাজ,—তৎক্ষণাৎ মুখোস চারিটি হাতে হাতে নামিয়া আসিয়া তাহীদের চারি জনের মুখে উঠিল । সঙ্গীদিগের মুথোসপর মুখের দিকে চাহিয়া শরৎকুমার হাসিয়া বলিলেন, “বদলিতে ভৰ্ত্তি হ’তে পারব—খুব অাশা হচ্ছে— । বাণী বাজিয়ে দলের অনুপস্থিত লোকদেরই ত ডাকা হচ্ছে, ন! দীমুমিঞা ?” দীনেশ ঘাড় নাড়িয়া জানাইল –"ক্ত্য ।” “সাড়া দাও তুমি— তোমার কাছে বাণী আছে নিশ্চয়ই ?” “আছে ,o “বাশীতে সাড়া দিয়ে আমরা চল বেরিয়ে পড়ি ।” দীনেশ বাণী না বাজাইয়া বলিল-—“কিন্তু যদি নাম জিজ্ঞাস করে ?” শরৎকুমার বুক ঠুকিয়া বলিলেন—“তার জন্ত ভাবনা কি ? অামি পরশুরামজি ৪ নম্বর - এই না ছিল, সন্তোষের নাম ?” সন্তোষের নোটবুক হইতে এইরূপ অনেক খবরই তাহার। জানিয়াছেন, দীনেশের মুখেও শরৎকুমার তাহা যাচাই করিয়া লইতে চাহেন । অনাদি বলিল—“আপনি ত পরশুরাম, দীনেশ ত নীমু মিয়া আর আমরা দু’জন ?”