জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ

উইকিসংকলন থেকে
জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ

জাতীয় আন্দোলনে

রবীন্দ্রনাথ

শ্রীপ্রফুল্লকুমার সরকার

শ্রীসুরেশচন্দ্র মজুমদার

শ্রীগৌরাঙ্গ প্রেস, কলিকাতা


আনন্দ-হিন্দুস্থান প্রকাশনী

কলিকাতা

প্রকাশক: শ্রীসুরেশচন্দ্র মজুমদার

মুদ্রাকর: শ্রীপ্রভাতচন্দ্র রায়

শ্রীগৌরাঙ্গ প্রেস,

৫নং চিন্তামণি দাস লেন, কলিকাতা

প্রথম সংস্করণ—২৫ বৈশাখ, ১৩৫২

দ্বিতীয় সংস্করণ—আষাঢ়, ১৩৫৪

[এই গ্রন্থের প্রথম সংস্করণের বিক্রয়লব্ধ অর্থ
নিখিল-ভারত রবীন্দ্র-স্মৃতিভাণ্ডারে প্রদত্ত হইয়াছে।]

মূল্য দুই টাকা

ভূমিকা

 সুপ্রসিদ্ধ সাহিত্যিকসঙ্ঘ “রবিবাসর”-এর দুইটী অধিবেশনে “জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ” নামে আমি বক্তৃতা করিয়াছিলাম। বক্তৃতাগুলি সংশোধিত ও পরিবর্ধিত আকারে “দেশ” পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এখন বন্ধুদের অনুরোধে ঐগুলি পুস্তকাকারে প্রকাশ করিলাম।

 রবীন্দ্রনাথ বিরাট ব্যক্তিত্বশালী পুরুষ ছিলেন। তাঁহার প্রতিভা সর্বতোমুখী ছিল বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। নানা দিক দিয়া বাঙলা সাহিত্যে তাঁহার দান অতুলনীয়। বিশ্বসাহিত্যে তাঁহার আসন সুপ্রতিষ্ঠিত। অন্যদিকে বাঙলার তথা ভারতের জাতীয় জীবনের উপরেও তাঁহার প্রভাব অসামান্য। দুঃখের বিষয়, রবীন্দ্রনাথের আধুনিক সাহিত্যশিষ্য ও ভক্তেরা রবীন্দ্রনাথের জীবনের এই “রাজনৈতিক” দিকটা লইয়া তেমন আলোচনা করেন না, ইহার উপর গুরুত্ব আরোপ করিতে কুণ্ঠিত হন। তাঁহারা রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বপ্রেমিক ও বিশ্বমানবের পূজারী বলিয়া গর্ব অনুভব করেন, কিন্তু তিনি যে সর্বাগ্রে স্বদেশ ও স্বজাতিপ্রেমিক এবং জাতীয়তাবাদী ছিলেন, একথা স্বীকার করিতে যেন লজ্জাবোধ করেন।

 অথচ আমরা মনে করি, রবীন্দ্রনাথের জীবনের মূলমন্ত্র,—তাঁহার সমস্ত কবিত্বের উৎস ছিল এই স্বদেশ ও স্বজাতিপ্রেম, বাল্যকাল হইতেই জাতীয়তাবাদের আদর্শ তাঁহার জীবন ও সাহিত্যের গতি নিয়ন্ত্রিত করিয়াছিল। এই গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের জীবনের সেই দিকটা লইয়াই আমি বিশেষভাবে আলোচনা করিয়াছি। তাঁহার অসাধারণ কবিপ্রতিভা বা তাঁহার সৃষ্ট অতুলনীয় সাহিত্যের মূল্য বিচার করিতে চেষ্টা করি নাই।

 ঊনবিংশ শতাব্দীতে নব্য বাঙ্গালী জাতির অভ্যুদয় আধুনিক জগতের ইতিহাসে একটা স্মরণীয় ঘটনা। এই অভ্যুদয়ের মূলে কোন কোন প্রবল শক্তি কার্য করিয়াছিল, পণ্ডিত ব্যক্তিরা তাহা লইয়া কিছু কিছু আলোচনা করিয়াছেন, কিন্তু সে আলোচনা এখনও সম্পূর্ণ হয় নাই। ভবিষ্যতে আরও আলোচনা হইবে বলিয়া আশা করি। কিন্তু বহু শতাব্দীর পরাধীনতায় পীড়িত জাতির অন্তঃস্তল হইতে স্বাধীনতা ও জাতীয় সমুন্নতির একটা অদম্য আকাঙ্ক্ষা যে এই যুগে জাগ্রত হইয়াছে এবং তাহাই যে জাতিকে তাহার লক্ষ্যপথে দুর্নিবার আকর্ষণে পরিচালিত করিয়াছে, তাহাতে সন্দেহ নাই। বহু মনীষী ও শক্তিশালী ব্যক্তি ঊনবিংশ শতাব্দীতে আবির্ভূত হইয়াছিলেন এবং তাঁহাদেরই সুদীর্ঘ তপস্যার ফলে বাঙলায় জাতীয় আন্দোলনের সৃষ্টি হইয়াছিল এবং সমগ্র ভারতে তাহা বিস্তৃত হইয়া পড়িয়াছিল। রবীন্দ্রনাথ সেই সব শক্তিশালী মনীষীদেরই অন্যতম এবং জাতীয় স্বাধীনতার জন্য তাঁহার তপস্যার দানও অসামান্য। ইহা তাঁহার জীবনের একটা গৌরবোজ্জ্বল অংশ। যাঁহারা এই দানকে ছোট করিয়া দেখিতে চাহেন, স্বজাতির ইতিহাসের সঙ্গে তাঁহাদের পরিচয় হয় নাই। উহার গভীর মর্ম তাঁহারা উপলব্ধি করিতে পারেন নাই, একথা দৃঢ়তার সঙ্গেই বলিব। এই কারণেই, বাঙলার জাতীয় আন্দোলন বা স্বদেশী আন্দোলনকে এই সব স্থূলদৃষ্টি ব্যক্তিরা “বুর্জোয়া আন্দোলন” বা “পাতি বুর্জোয়া আন্দোলন” ইত্যাদি অদ্ভুত নামে অভিহিত করিয়া থাকেন। কত বড় একটা বিরাট আদর্শ ঐ জাতীয় আন্দোলনের পশ্চাতে ছিল তাহা তাঁহারা দেখিতে পান না, বা দেখিবার চেষ্টা করেন না।

 পরাধীন জাতির জীবনে ‘ভাব দাসত্ব’ একটা ব্যাধিবিশেষ। এক সময়ে পাশ্চাত্য সংশয়বাদ ও প্রত্যক্ষবাদ প্রভৃতি আমাদের শিক্ষিত সমাজকে পাইয়া বসিয়াছিল। এখন আবার “মার্ক্সবাদ” আমাদের আধুনিক শিক্ষিত সমাজের বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিয়াছে। তাঁহাদের নিকট উহাই জ্ঞানরাজ্যের শেষ কথা, সমাজ, সাহিত্য, ধর্ম, রাষ্ট্রনীতি—সব কিছুই এই একমাত্র কষ্টি পাথরে ঘষিয়াই তাঁহারা পরীক্ষা করিয়া থাকেন। যত কিছু সুন্দর বা মহৎ জিনিষই হউক না কেন, এই বিচারে না টিকিলে তাহার কোন মূল্যই তাঁহারা স্বীকার করেন না। “মার্ক্সবাদ” অতি উচ্চাঙ্গের তত্ত্ব সন্দেহ নাই। মানুষের জ্ঞানভাণ্ডারে মার্ক্সের অতুলনীয় দানের মূল্যও কেহ অস্বীকার করে না। কিন্তু দেশকালপাত্রনির্বিচারে উহাই মানবসভ্যতা তথা রাষ্ট্র ও সমাজের অভিব্যক্তি বিশ্লেষণ বা তাহার মূল্য নির্ধারণ করিবার একমাত্র মাপকাঠি, ইহা আমরা স্বীকার করিতে পারি না। মার্ক্স মানবসভ্যতার অভিব্যক্তির মূলে অর্থনৈতিক কারণকেই প্রাধান্য দিয়াছেন, এমন কি অনেকস্থলে উহাকেই একমাত্র কারণ বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন। কিন্তু আধুনিক কালের বহু মনীষী একথা স্বীকার করেন না। তাঁহারা মানবসভ্যতা বা মানবসমাজের অভিব্যক্তির মূলে অন্যান্য প্রবল শক্তির ক্রিয়াও লক্ষ্য করিয়াছেন। প্রেম, সৌন্দর্য, দুর্জ্ঞেয় বিশ্বরহস্যের মূল অনুসন্ধানের দুর্নিবার প্রবৃত্তি, স্বাধীনতার দুর্দমনীয় আকাঙ্ক্ষা—এই সমস্তই মানবসমাজের অভিব্যক্তির মূলে কার্য করিয়াছে, মানবসভ্যতার গতিপথ নিয়ন্ত্রিত করিয়াছে। এগুলিকে একমাত্র অর্থনৈতিক কারণের হামামদিস্তায় ফেলিয়া চূর্ণ করিয়া সর্বরোগহর মকরধ্বজ প্রস্তুত করিবার চেষ্টা নিশ্চয়ই সমর্থনযোগ্য নহে। ইউরোপে গ্রীক বা রোমক সভ্যতার অভিব্যক্তি, পঞ্চদশ শতাব্দীর রেনেসাঁস। ফরাসী বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, অন্যদিকে ভারতে আর্য্যসভ্যতা ও বৌদ্ধসভ্যতার বিকাশ, আরব সভ্যতার অভ্যুদয়, এ সকলের মূলে অর্থনৈতিক কারণ ছাড়া কি আর কিছুই ছিল না? ভারতে মধ্য যুগের ধর্মসংস্কার আন্দোলন, বাঙলা দেশের পাল ও সেন যুগের সভ্যতা, ষোড়শ শতাব্দীর রেনেসাঁস—উহাদের মূলেও নিশ্চয়ই অন্যান্য শক্তির ক্রিয়া ছিল।

 বাঙলা দেশে ঊনবিংশ শতাব্দীতে যে জাতীয় অভ্যুদয়ের আন্দোলন হইয়াছিল, তাহার মূলেও তেমনি বিভিন্ন শক্তির ক্রিয়া আমরা প্রত্যক্ষ করি। এ আন্দোলনে জাতীয় জীবনের সমস্ত দিকেই সাড়া পড়িয়া গিয়াছিল। সাহিত্য, ধর্ম, সমাজ, রাষ্ট্রনীতি—সকল ক্ষেত্রেই একটা নবজাগরণ আসিয়াছিল। জাতীয় আন্দোলন বা জাতীয় স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা তাহারই একটা অভিব্যক্তি; কংগ্রেস, স্বদেশী আন্দোলন প্রভৃতির ভিতর দিয়া তাহাই রূপ পরিগ্রহ করিয়াছে। ইহাকে কেবল মাত্র “বুর্জোয়া আন্দোলন” বা “পাতি বুর্জোয়া আন্দোলন” বা চাকুরীপ্রার্থীদের বিক্ষোভের ফল বলিয়া উড়াইয়া দিবার চেষ্টা মূঢ় ভাবদাসত্ব ছাড়া আর কিছুই নহে। জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধের মধ্যে যাঁহারা ‘বুর্জোয়া’ বা “পাতি বুর্জোয়া” মনোভাব ব্যতীত আর কিছুই দেখিতে পান না, তাঁহারা নিতান্তই করুণার পাত্র।

 এইরূপ ভাবদাসত্বে যাঁহাদের বুদ্ধি আচ্ছন্ন হইয়াছে, তাঁহারাই জাতীয় ভাব বা স্বাদেশিকতাকে ক্ষুদ্র জিনিষ বলিয়া মনে করেন, স্বদেশপ্রেম বা স্বজাতিপ্রেমও ইঁহাদের নিকট বড় কথা নহে। বিশ্বের “সর্বহারাদের” মুক্তি ভিন্ন অন্য সমস্ত জিনিষকেই ইঁহারা তুচ্ছ মনে করেন। কিন্তু অদৃষ্টের পরিহাস, ইঁহাদের পীঠস্থান মস্কো এবং মহাগুরু ষ্ট্যালিন ইঁহাদিগকে লজ্জা দিয়াছেন। এই মহাযুদ্ধে মহাবীর ষ্ট্যালিন স্বদেশপ্রেম বা জাতীয়তাকেই বড় আদর্শ বলিয়া ধরিয়াছেন, রুশজাতি তাই ফাদারল্যাণ্ড বা পিতৃভূমি রাশিয়ার স্বাধীনতা রক্ষার জন্যই যুদ্ধ করিতেছে, বিশ্বের সমস্ত নিঃস্ব সর্বহারাদের মুক্তির জন্য নহে। তাই আমাদের মনে আশা জাগিয়াছে, বাঙলা তথা ভারতের জাতীয় স্বাধীনতার আন্দোলনকেও হয়ত আধুনিক পণ্ডিতেরা আর একটু বড় করিয়া দেখিতে চেষ্টা করিবেন। স্বদেশপ্রেম ও স্বজাতিপ্রীতি যে তুচ্ছ জিনিষ নয়, ইহাও হয়ত ক্রমে উপলব্ধি করিতে পারিবেন। এবং তাহা হইলেই বাঙলার তথা ভারতের জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের দান যে কত মহৎ সে-কথাও তাঁহারা বুঝিতে পারিবেন।

 বিশ্বপ্রেম, সর্বমানবপ্রীতি এ সমস্তই খুব বড় আদর্শ সন্দেহ নাই। কিন্তু স্বদেশপ্রেম ও স্বজাতিপ্রীতি যাহাদের নাই, তাহারা বিশ্বপ্রেম বা সর্বমানবপ্রীতির মূল্য বুঝিবে কিরূপে? যাহারা পরাধীন, দেশকে স্বাধীন করিবার দুর্দমনীয় আকাঙ্ক্ষা যাহাদের নাই, তাহাদের পক্ষে বিশ্বপ্রেম, নিখিল ভুবনের সর্বহারাদের দুঃখমোচনের কথা মুখে আনিবার কোন অধিকার নাই। গভীর দুঃখের সহিত বলিতে হইতেছে, আজ আমাদের তরুণদের সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম ও স্বজাতিপ্রীতির কোন অভিব্যক্তি দেখিতে পাই না; ইহারা যে পরাধীন দেশ ও পরাধীন জাতির মধ্যে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, পরবশতার গ্লানি ও বেদনা ইহাদের মর্মে তপ্তশেলের মত বিঁধিতেছে, এমন কোন লক্ষণের প্রকাশ নাই, জাতীয় স্বাধীনতা লাভের তীব্র আকাঙ্ক্ষাও কোন “সাম্প্রতিক” কবি বা সাহিত্যিকের লেখার মধ্যে দূরবীক্ষণ লাগাইয়াও খুঁজিয়া পাই না। তৎপরিবর্তে একটা অবাস্তব আত্মকেন্দ্রিক সাহিত্যের সৃষ্টি হইতেছে, আধুনিক কবিতার নামে কতকগুলি দুর্বোধ্য শব্দসমষ্টি বাঙলা সাহিত্যকে প্লাবিত করিয়া ফেলিতেছে; ‘সন্ধ্যা ভাষায়’ রচিত বৌদ্ধ গান ও দোঁহার মতই এগুলি সাধারণ মানববুদ্ধির অগোচর অস্পষ্ট হেঁয়ালী বা প্রহেলিকা মাত্র। আধুনিক বা সাম্প্রতিক কবি ও সাহিত্যিকেরা এগুলিকে “নবযুগের ভাবধারার অভিব্যক্তি” বলিয়া যতই আত্মপ্রসাদ লাভ করুন; বা আত্মপ্রবঞ্চনা করুন, আমরা এই সাহিত্যকে বাঙালীর জাতীয় মনের অধঃপতনের পরিচায়ক বলিয়াই মনে করি। ইহার পশ্চাতে কোন বড় ভাব বা আদর্শের প্রেরণা নাই।

 গত শতাব্দীতে বাঙলাদেশে যে জাতীয় আন্দোলনের জন্ম হইয়াছিল, সাহিত্যের মধ্য দিয়া তাহা সুস্পষ্টরূপেই অভিব্যক্ত হইয়াছিল; পক্ষান্তরে সেই আন্দোলন সৃষ্টিতে বাঙলা সাহিত্যও যে অশেষ প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। রবীন্দ্রনাথ একাধারে সেই জাতীয় ভাবধারার উত্তরাধিকারী এবং স্বয়ং বহুল পরিমাণে উহার স্রষ্টা। রবীন্দ্রপূর্ববর্তী এবং তাঁহার সমসাময়িক জাতীয় আন্দোলনকে না বুঝিলে রবীন্দ্রনাথকে বুঝা যায় না, আবার রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁহার সৃষ্ট সাহিত্যকে না বুঝিলে বাঙলার জাতীয় আন্দোলন তথা স্বদেশী আন্দোলনকেও সম্যক বুঝা যায় না। বর্তমান গ্রন্থে আমরা সেই দিক দিয়াই বাঙলার জাতীয় আন্দোলন এবং রবীন্দ্রনাথকে বুঝিবার চেষ্টা করিয়াছি, কতদূর সফলকাম হইয়াছি, পাঠকদের উপরেই তাহার বিচারের ভার।


প্রকাশকের নিবেদন

 আজ রবীন্দ্রনাথের পুণ্য জন্মদিনে গ্রন্থখানি দেশবাসীর সম্মুখে উপস্থিত করিবার সুযোগ পাইয়া কৃতার্থ বোধ করিতেছি। বর্তমানের আদর্শবিমূঢ়তার দিনে গ্রন্থখানি যদি দেশবাসীর বিভ্রান্তি দূরীকরণে কিছু পরিমাণেও সহায়তা করে, তাহা হইলে এই আয়োজন সার্থক হইবে। গ্রন্থকার তাঁহার জীবিত কালেই গ্রন্থখানির পাণ্ডুলিপি সমাপ্ত করিয়া রাখিয়া গিয়াছিলেন। তাঁহার ইচ্ছা ছিল ১৩৫১ সনে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিবসে গ্রন্থখানি প্রকাশিত করিবেন। কিন্তু ১৩৫০ সনের চৈত্রসংক্রান্তির দিন তিনি পরলোকগমন করাতে তাঁহার সে ইচ্ছা পূর্ণ হয় নাই। গ্রন্থকারের মৃত্যুর পরও চেষ্টা করিলে গত বৎসর রবীন্দ্রজন্মদিনে গ্রন্থখানি প্রকাশ করা যে সম্ভব না হইত তাহা নহে। কিন্তু সদ্য শোকচ্ছায়ার পরিবেশে তাহা করা সমীচীন বলিয়া মনে করি নাই। রবীন্দ্রজন্মদিনে গ্রন্থপ্রকাশের যে সংকল্প গ্রন্থকারের ছিল, তাহা কার্যে পরিণত করিবার জন্যই তাহার পরেও গ্রন্থখানি প্রকাশ করা হয় নাই। গ্রন্থকার জীবিত থাকিলে গ্রন্থখানি যেরূপ নির্ভুল ও সুষ্ঠুরূপে প্রকাশ করা সম্ভব হইতে তাঁহার অভাবে যে তাহা সম্ভব হয় নাই তাহা বলা বাহুল্য মাত্র। তথাপি আমার যথাশক্তি ইহাকে নির্ভুলভাবে প্রকাশ করিবার চেষ্টা করিয়াছি। তাহা সত্ত্বেও যে ভুলভ্রান্তি থাকা সম্ভব সে সম্বন্ধে আমি সচেতন। সহৃদয় পাঠকগণ যদি ভ্রমসংশোধনে সহযোগিতা করেন তাহা হইলে অনুগৃহীত হইব। গ্রন্থকারের ইচ্ছা ছিল, গ্রন্থখানি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়। তাঁহার অভিপ্রায় অনুসারে ইহা মহাকবির স্মৃতির উদ্দেশেই সমর্পিত হইল।

২৫ বৈশাখ, ১৩৫২
শ্রীসুরেশচন্দ্র মজুমদার

সূচী।

১।
২। ১৬
৩। ৩২
৪। ৪৯
৫। ৬৩
৬। ৮৩
৭। ৯৭
৮।
পরিশিষ্ট
(“স্বদেশী যুগে” বাংলা সাহিত্য)
 ··· 
১১৩

স্বদেশী যুগে রবীন্দ্রনাথ

এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পর (স্বনামে ও জীবদ্দশায় প্রকাশিত) বা প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর (বেনামে বা ছদ্মনামে এবং মরণোত্তর প্রকাশিত) পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে তাঁর সকল রচনার কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত (বা পূর্বে মৃত লেখকের) সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।