পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিওর মুখের পানে রাখিয়া তাহার হাত ধরিয়া মেরি কহিল, “লিও ভয় করিও না-তোমার মেরি এখনও মরে নাই ।” এ কথার অর্থ সবাই বুঝে,-লিও অন্তরে আশীৰ্বাদ করিয়া মৃদু। কম্পিত-কণ্ঠে বলিল, “তাই হউক।--জগদীশ্বর তোমাকে সুখে রাখিবেন।” কিন্তু সেবার দুইজনেরই বড় দুর্বৎসর পড়িয়াছিল,-অধিক দিন না যাইতেই ক্যাপ্টান নোেল জ্বরবিকারে প্রাণত্যাগ করিলেন । পিতৃ-মাতৃহীন মেরি লিওর বুকে মুখ রাখিয়া কঁাদিতে কঁাদিতে বলিল, “লিও শুধু তুমি রহিলে-বিপদে-সম্পদে আমাকে রক্ষা করিও ।” লিও চক্ষু-দুটি মুছইয়া দিয়া বলিল, “করিব' } “প্রতিজ্ঞা করা কখন পরিত্যাগ করিবে না ।” “প্রতিজ্ঞা করিলাম। মেরি মুখ তুলিয়া ধীরে ধীরে বলিল, “তবে আর কঁদিব না। — আমার সব আছে।’ দুই লিও একখানি পুস্তক লিখিয়াছিল। লণ্ডন নগবে তাহার একজন বন্ধু ছিলেন । সমালোচনায় জন্য হস্তলিখিত পুস্তকখানি তঁহার নিকট পাঠাইয়া দেয় । কিছুদিন পরে এইরূপ উত্তর আসিল, “বন্ধু, তোমার গৌরবে আমি গৌরবান্বিত হইয়াছি। তোমােৱ লিখিত পুস্তকখানি একজন পুস্তক-প্রকাশকের নিকট কতকটা বাধ্য হইয়। বিক্রয় করিয়াছি। পাঁচ শত পাউণ্ড পাঠাইলাম-রাগ করিও না, ভবিষ্যৎ উন্নতির বোধহয় ইহাই সোপান ।” এ কথা শুনিয়া মেরির চক্ষে জল আসিল,--আনন্দে সে লিওর মুখচুম্বন করিয়া বলিল, “লিও জগতে তুমি সর্বপ্রধান কবি হইবে।” লিও হাসিয়া উঠিল, "আর কিছু না হউক মেরি, পিতার ঋণ বোধহয় পরিশোধ করিতে পারিব ।”