পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মেরি আজকাল স্বয়ং উত্তমর্শ, তাই এ কথায় বড় লজ্জা পাইত । রাগ করিয়া বলিল, “এ কথা পুনর্বার বলিলে তোমার কাছে আমি আর আসিব না ।” লিও হাসিল, মনে মনে কহিল, “তোমার পিতার নিকট আমার পিতা ঋণী ; আমার দুজনে তঁহাদের সন্তান, তাই আমি জীবিত থাকিলে এ ঋণ তোমার নিকট পরিশোধ করিবই।” লিওর আজকাল বড় পরিশ্রম বাড়িয়াছে ; নূতন পুস্তক লিখিতেছিল, আজ সমস্ত দিন মুখ তুলিয়া চাহে নাই! মেরি প্রত্যহ যেমন আসিত, আজিও তেমনি আসিয়াছিল। লিওর শয়নকক্ষ, পাঠাগার, বসিবার ঘর প্রভৃতি স্বহস্তে সাজাইয়া গুছাইয়া দিয়েছিল । দাসদাসী সত্ত্বেও এ কাজটি মেরি নিজে করিয়া যাইত । সম্মুখে একখানা দৰ্পণ ছিল, লিওর প্রতিবিম্ব তাহার উপর প্রতিফলিত হইয়াছিল । মেরি বহুক্ষণ ধরিয়া তাহা দেখিয়া বলিল, “লিও তুমি স্ত্রীলোক হইলে এতদিন ইংলণ্ডের রানী হইতে । লিও হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কেন’ ? “অত রূপ দেখিয়া রাজা তোমাকে বিবাহ করিয়া সিংহাসনে লইয়া যাইতেন ! তোমার মত কৃষ্ণ কুঞ্চিত কেশরাশি আমি আর্ট গ্যালারিতে কোন রাণীর দেখি নাই ; এমন শুভ্র কোমল মুখশ্রী কোন সম্রাজ্ঞীর ছিল ? গোলাপ পুষ্পের মত এমন কোমল মধুময় দেহশোভা স্বৰ্গে ভিনসেরও ছিল বলিয়া মনে হয় না ।” লিও খুব হাসিয়া উঠিল। কলেজে অধ্যয়নকালেও এমন কথা অনেকে কহিয়াছিল ; বোধহয় তাহাই মনে পড়িয়াছিল । হাসিয়া কহিল, ‘রূপ যদি চুরি করা যাইত তা হইলে তুমি বোধহয় এ রূপ চুরি করিয়া আমাকে ফঁাকি দিয়া এতদিনে ইংলণ্ডের রানী হইয়া যাইত ।” মেরি মনে মনে অপ্রতিভ হইয়া সলজ্জ হাসিয়া বলিল, “তুমি স্ত্রীলোকের মত দুর্বল, তাহদের মত কোমল তাহাদের মতই সুন্দরতোমার রূপের সীমা নাই ।” এত রূপের নিকট মেরি আপনাকে বড় ক্ষুদ্র বিবেচনা করিত । ز