পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সাধুসন্তদের অলৌকিক ক্ষমতা
১০৭

স্বামী-স্ত্রীতে গেলাম মন্দিরে। পুজো দিলাম। সন্ধ্যারতির পর পুরোহিতকে প্রণাম করে নিজের পরিচয় দিয়ে আসার উদ্দেশ্য জানালাম। পুরোহিত বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়ে আমার স্ত্রীর কোমর ও পায়ে হত বুলিয়ে দিলেন। একসময় জিজ্ঞেস করলেন, “কি, এখন ব্যথা কমেছে না?” অবাক হয়ে গেলাম আমার স্ত্রী জবাব শুনে। ও নিজের শরীরটা নাড়া-চাড়া করে বলল, “হ্যাঁ, ব্যথা অনেক কমেছে।” এইসব অতি-মানুষের হয়তো কোনও দিনই আপনার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে তাঁর অলৌকিক ক্ষমতার প্রমাণ দিতে হাজির হবেন না। কিন্তু এদের অলৌকিক ক্ষমতার প্রমাণ পাওয়ার পর তা অস্বীকার করব কী ভাবে?”

 আমি বলেছিলাম, “যতদূর জানি আপনার স্ত্রীর বাতের ব্যথা এখনও আছে।”

 আমার মুখের কথা প্রায় কেড়ে নিয়ে প্রাক্তন চীফ সেক্রেটারী জবাব দিয়েছিলেন, “পুরোহিত অবশ্য আরও কয়েকবার ঝেড়ে দিতে হবে বলে জানিয়েছিলেন। কাজের তাগিদে আর যাওয়া হয়নি। ত্রুটিটা আমাদেরই।”

 এই সাময়িক আরোগ্যের কারণ পুরোহিতের প্রতি রোগিণীর বিশ্বাস, পুরোহিতের অলৌকিক কোনও ক্ষমতা নয়। অথবা, পুরনো রোগের নিয়ম অনুসারেই স্বাভাবিকভাবেই সেইসময় গেঁটে-বাতের প্রকোপ কিছুটা কম ছিল।

 অর্শ রোগীদের অনেকেরই হাতের আঙুলে শোভিত হয় আড়াই প্যাঁচের একটা রুপোর তারের আংটি। যাঁরা এই আংটি পরেন, তাঁদের কাছে কোনও অর্শ রোগী আংটি ধারণ করে নিরাময় চাইলে সাধারণভাবে আড়াই-প্যাঁচি আংটির ধারক তাঁর আংটির তারের ছোট্ট একটা টুকরো কেটে দেন। ওই টুকরো স্যাঁকরাকে দিয়ে আড়াই-প্যাঁচ আংটি তৈরি করে ধারণ করেন। ধারণ করার পর অর্শ রোগ সত্যিই কি সারে? আমি দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়ে ২০০ জানের উপর একটা অনুসন্ধান চালিয়েছিলাম। সাধারণত যাদের হাতেই আড়াই-প্যাঁচ আংটি দেখেছি, তাদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করেছি, আংটি পরে কতটা উপকৃত হয়েছেন। শতকরা ৩০ ভাগের মতো ধারণকারী জানিয়েছেন, আংটি পরে উপকৃত হয়েছেন। শতকরা ৪৫ ভাগের মতো জানিয়েছেন, আংটির গুণ আছে কি না, এই বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্তে আসার মতো কিছু বোঝেননি। বাকি ২৫ ভাগ জানিয়েছেন, কিছুই কাজ হয়নি। অর্শ অনেক সময় স্বাভাবিক নিয়মেই প্রাকৃতিক সারে। যাঁদের সেরেছে, তাঁরা প্রাকৃতিক নিয়মকেই আংটির অলৌকিক নিয়ম বলে ভুল করেছেন।

 এই প্রসঙ্গে আর একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। ১৯৮৮-র ২৯ জুলাই সাংবাদিক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এক প্রতিবেদনে আনন্দবাজার পত্রিকায় মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে লেখা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেনের চিঠি প্রকাশিত হয়েছে। চিঠিটা এখানে তুলে দিচ্ছি।