পাতা:আজাদ হিন্দ ফৌজ - দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ
১৫

পিংপং খেলিতে ভালবাসিতেন। মোডিক্যাল কলেজ হইতে ডাক্তারী পাশ করিবার পর তিনি মাদ্রাজ ফ্লাইং ক্লাবের শিক্ষক বাঙ্গালোর নিবাসী বিমানচালক জনৈক ব্রাহ্মণযুবকের সহিত পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হইতে মনস্থ করেন। কিন্তু শীঘ্রই গতানুগতিক গার্হস্থ্য-জীবনের আকর্ষণ তাঁহার কাছে নিষ্প্রভ হইয়া যায়। তিনি নিস্তরঙ্গ ও নিরাপদ জীবন যাপনের মোহ কাটাইয়া বিপদসঙ্কুল বৃহত্তম জীবনের সহিত পরিচিত হইবাব জন্য বাহির হইয়া পড়েন এবং ১৯৪০ সালে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা ব্যবসায় আরম্ভ করেন।

 বহুগুণবিভূষিতা শ্রীমতী লক্ষ্মী মাদ্রাজে তাঁহার প্রোজ্জ্বল দেশপ্রেমের জন্য খ্যাত ছিলেন। তাঁহার কংগ্রেসানুরাগ সুবিদিত ছিল। কংগ্রেস নির্ধারিত দিবসগুলি তিনি নিষ্ঠার সহিত পালন করিতেন এবং ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকা তাঁহার গৃহে উত্তোলন করিতেন। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু কয়েকবার শ্রীমতী লক্ষ্মীর বাসায় বেড়াইতে গিয়াছিলেন এবং গৃহস্থ অধিবাসীদের নৈষ্টিক দেশপ্রেম দর্শনে তিনি মুগ্ধ হইয়াছিলেন। জাপান কর্তৃক সিঙ্গাপুর অধিকৃত হইবার প্রাক্কালে শ্রীমতী লক্ষ্মীকে স্থান ত্যাগ করিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তিনি ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ইহার পর কিছুদিন আর তাঁহার সম্পর্কে কোন সংবাদ পাওয়া যায় না।

 অতঃপর একদিন সাইগল রেডিও হইতে বিজ্ঞাপিত হয় যে, শ্রীমতী লক্ষ্মী মালয়ে যে অস্থায়ী গবর্ণমেণ্ট প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে সেই গবর্ণমেণ্টের অন্তর্ভুক্ত হইয়াছেন। অতঃপর তাঁহার নেতৃত্বে “ঝাঁসীর রাণী” এই নামে নারী যোদ্ধৃ বাহিনী গঠিত হয়।

 ১৯৪৫ সালের অক্টোবর মাসে শান ষ্টেটে কালওয়া নামক স্থানে বার্মা রক্ষা আইনে তাঁহাকে অন্তরীণ করা হয়। ১৯৪৬ সালে ৩রা মার্চ্চ বর্ম্মা হইতে দমদম বিমান ঘাঁটিতে আনার পর মুক্তি দেওয়া হয়। অপূর্ব বীরত্ব ও দুঃসাহসিক প্রচেষ্টার জন্য লেঃ কর্ণেল লক্ষ্মীর নাম পৃথিবীর মুক্তিলিপ্সু বীরাঙ্গনাদের তালিকায় চিরউজ্জ্বল থাকিবে।