পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 এই ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন কখনই বহু রক্তঝরানো সংগ্রাম ছাড়া সাফল্য অর্জন করতে পারে না। কারণ শোষক-শাসকগোষ্ঠী নিশ্চিতভাবেই কোনও জনগোষ্ঠীকে তাদের শোষণ-আওতার বাইরে যেতে দেবে না। শোষক-শাসকগোষ্ঠীর কাছে এটা শুধুমাত্র একটি জনগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে কায়েম করার লড়াই নয়। তারা জানে, একটি বিচ্ছিন্নতাকামী জনগোষ্ঠীর জয় আরও বহু সুন্দর সমাজ গড়ার স্বপ্নের জন্ম দেবে, আরও বহু বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের জন্ম দেবে। আর তাই শাসক-শোষকগোষ্ঠী বিচ্ছিন্নতাকামী জনগোষ্ঠীর উপর তীব্র থেকে তীব্রতর সন্ত্রাস চালাতে থাকে। এই সন্ত্রাস থেকে বাঁচতে ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে কায়েম করতে বিচ্ছিন্নতাকামী জনগোষ্ঠীকে পাল্টা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিতেই হয়। অমনি শোষক-শাসকগোষ্ঠী তাদের সহযোগী প্রচার মাধ্যম ও বুদ্ধিজীবীদের সহযোগিতায় বিচ্ছিন্নতাকামী জনগোষ্ঠীর গায়ে 'সন্ত্রাসবাদী' বা 'টেররিস্ট” শব্দটি দেগে দেয়। প্রচারের মহান ক্ষমতায় 'টেররিস্ট' ও 'ক্রিমিনাল' শব্দদুটি আমাদের কাছে সমার্থক হয়ে দাঁড়ায়।

 শোষক-শাসকদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেওয়া ‘টেররিস্ট' বা ‘সন্ত্রাসবাদী” এমন একজন মানুষ যে বঞ্চনা ও অবিচারের সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে তার উপর গড়ে তুলতে চায় এক বঞ্চনাহীন মানব-সমাজ। একজন টেররিস্ট-এর মধ্যে অবশ্যই রয়েছে জগতের বঞ্চনা ও অবিচার সম্পর্কে দার্শনিক আত্মোপলব্ধি। এই ধরনের দর্শনবোধ দ্বারা পরিচালিত না হয়ে যারা সমাজের উপর ধ্বংসের লীলা চালায় আপন ভোগবাদী মানসিকতাকে চরিতার্থ করতে, তারা 'ক্রিমিনাল'। শাসক-শোষকগোষ্ঠীর পক্ষে আইনকে পরোয়া না করে লুঠ-ধর্ষণ-অত্যাচার-হত্যার সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী ভাড়াটে সেনা-পুলিশরা তাই শেষ পর্যন্ত আর ‘সন্ত্রাসবাদী' হয়ে ওঠে না, হয়ে ওঠে সবচেয়ে সংগঠিত ক্রিমিনাল।

O

একজন ‘টেররিস্ট'-এর মধ্যে অবশ্যই রয়েছেম জগতের বঞ্চনা ও অবিচার সম্পর্কে দার্শনিক আত্মোপলব্ধি। এই ধরনের দর্শনবোধ দ্বারা পরিচালিত না হয়ে যারা সমাজের উপর ধ্বংসের লীলা চালায় আপন ভোগবাদী মানসিকতাকে চরিতার্থ করতে, তারা ক্রিমিনাল।

O

 রাষ্ট্রশক্তি কিন্তু কোনও জনগোষ্ঠীর গায়ে 'বিচ্ছিন্নতাবাদী' বা 'সন্ত্রাসবাদী' শিলমোহর দেগে দিয়ে 'কাজ শেষ' ভেবে চুপচাপ বসে থাকে না। ইতিহাস অন্তত একথাই বলে। পৃথিবীর যে কোনও অসাম্যের সমাজ কাঠামোকে বজায় রাখা রাষ্ট্রশক্তি এক্ষেত্রে যা করে তা হল, নিজেদের ভাড়াটে সেনাদের সাহায্যে হাটে-বাজারে-বাসে-ট্রেনে নিরীহ মানুষদের হত্যা করে বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের নামে ঘটনাস্থলে কিছু স্লোগান দিয়ে ও প্রচারপত্র ছড়িয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের বিরুদ্ধে ঢালাও জনসমর্থন আদায় করে। এই ধরনের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্র

৬২