বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাস্টক্লাশভূত 8役重 বললেন যে রেলের বড়সাহেব এখন সিমলায়; তা ছাড়া এ ট্রেনে কোন সাহেব আসেওনি, কোথায়ও নেমেও যায়নি। এখন বুঝলুম, যার হাতে আমি নাস্তানাবুদ হয়েছি, সে সাহেব নয়-সাহেবের ভূত। তারপর স্টেসন বাবু আমাকে থানায় পাঠিয়ে দিলেন। সেখানেও প্রথম একপত্তন মার হল, তার পর দারোগ বাবুর জেরা। যা ঘটেছিল, সব তীকেও বললুম। তিনি ভূতের কথায় বিশ্বাস করলেন, কেননা তিনিও একটি পেত্নীর হাতে পড়ে বেজায় নাজেহাল হয়েছিলেন। তার পরদিনই দারোগ বাবু আমাকে আদালতে হাজির করলেন। আমার অপরাধ নাকি গুরুতর, আর অবিলম্বে আমার বিচার হওয়া চাই। হাকিম। বাবু ছিলেন অতিশয় ভদ্রলোক, উপরন্তু উচ্চশিক্ষিত। তিনি গাড়ীতে ভূতের উপদ্রবের কথা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করলেন, কারণ তিনি ছিলেন ঘোর থিয়োজফিস্ট। কিন্তু ভগবানের দােহাই ও ভূতের দোহাই ইংরেজের আদালতে চলে না। ভগবান ও ভূত এ দুয়ের অস্তিত্ব বে-আইনী । অগত্যা তিনি আমাকে এক মাসের মেয়াদে জেল দিলেন। আমার অপরাধ বিনা টিকিটে বিনা বসনে ফাস্ট ক্লাশ গাড়ীতে গাঁজা খেয়ে ভ্ৰমণ। তারপর আমাকে সতর্ক করে দিলেন এই বলে যেগাঁজা খাও ত খেয়ে ; কিন্তু গাঁজায় দম দিয়ে আর কখনও বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়ে না, বিশেষত তৈলঙ্গস্বামী সেজে ফাস্ট ক্লাশে ত নয়ই! আমি বললুম-“হুজুর, গাঁজা আমি খাইনে।” ”তিনি বললেন, “গাঁজাখোর বলেই ত তোমাকে লঘুদণ্ড দিলুম, নইলে তোমাকে দায়রা সোপর্দ করতুম।” এখন তোমরা ফাস্ট ক্লাশ ভূতের কথা ত শুনলে। এদের তুলনায় পাড়ার্গেয়ে ভূতেরা ঢের বেশি সভ্য।