পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বল্প-গল্প এ গল্প আমি আমার আকৈশোর বন্ধু কুমার বাহাদুরের মুখে । শুনেছি। যাকে আমি কুমার বাহাদুর বলছি, তিনি রাজপুত্র ছিলেন না ; ছিলেন শুধু একটি পাড়ার্গেয়ে মধ্যবিত্ত জমিদারের একমাত্ৰ সন্তান। র্তার নাম ছিল কুমারেশ্বর, তাই কলেজে তার সহপাঠীরা মজা করে তঁাকে কুমার বাহাদুর বলে ডাকতেন। এই নামটাই আমাদের মধ্যে প্ৰচলিত হয়ে গিয়েছিল। শুধু কুমার নামটা কেমন নেড় নেড়া শোনায়-ওর পিছনে “বাহাদুরী” লেজুড়টা জুড়ে দিলে নামটাও যেমন ভরাট হয়, কানও তেমনি সহজে তা গ্ৰাহ করে ; কেননা, কান তাতে অভ্যস্ত। কুমার বাহাদুরও এই ডাকনামে কোন আপত্তি করেননি। পড়েপাওয়া চোঁদ আন কে প্রত্যাখ্যান করে---বিশেষত যে জিনিস দাম দিয়ে কিনতে হয়, তা অমনি পেলে কে না খুসি হয় ? যদিও তিনি জানতেন যে, ও নামের ভিতর একটু প্রচ্ছন্ন খোঁচা আছে ; যে খোচা-যাদের খেটে খেতে হবে তারা, যাদের তা করতে হবে না। তাদের গায়ে বিধিয়ে সুখ পায়। ও একরকম কথার চিমটি কাটা। কুমার বাহাদুরের sense of humour দিব্যি সজাগ ছিল, তাই তিনি ছোটখাটো অনেক কথা ও ব্যবহার-ঈষৎ বিরক্তিকর হলেও ছোট বলেই হেসে উড়িয়ে দিতেন ; যেমন আমরা গায়ে মাছি বসলে, তাকে উড়িয়ে দিই। পরশ্ৰীকাতরতার উৎপাত মানুষমাত্ৰকেই উপেক্ষা করতে হয়, নইলে মানবসমাজ হয়ে উঠত একটা যুদ্ধক্ষেত্র। বলা বাহুল্য শ্ৰী মানে শুধু রূপ নয়, গুণও বটে ; শুধু লক্ষনী নয়, সরস্বতীও বটে। তিনি বি. এ. পাশ করবার পরে, অর্থাৎ কলেজ ছাড়ার পর বেশির ভাগ সময় দেশেই বাস করতেন। পাড়াগাঁয়ে নাকি সময় দিব্যি কাটান।