পাতা:জীবনী সংগ্রহ - গনেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়.pdf/২৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R6 8 জীবনী-সংগ্ৰহ । যে সকল ব্যক্তি বিচরণ করিতেছেন, তাহারা প্ৰায় সকলেই মায়ায় আবদ্ধ। সাধু বিজয়কৃষ্ণ, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, আত্মীয়স্বজন প্রভৃতির মধ্যে একত্রে বসবাস করিয়া জীবন অতিবাহিত করিয়াছেন ; কিন্তু মায়া কখনও ইহার হৃদয়কে আয়ত্তাধীন করিতে পারে নাই। শ্ৰীবৃন্দাবনে জীবনসঙ্গিনী সহধৰ্ম্মিণী ভয়ঙ্কর বিসূচিকা রোগে আক্রান্ত হইলে, ডাক্তার কবিরাজ, হাকিম প্ৰভৃতি চিকিৎসকগণ যখন একে একে হতাশ হইতে লাগিলেন, আত্মীয়গণ, শিষ্যমণ্ডলী এবং ব্ৰজবাসীরা অত্যন্ত চিন্তিত, উৎকণ্ঠিত ও ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন, তখনও ইহার যেরূপ ভাব পরিলক্ষিত হইয়াছিল, তাহার শ্ৰীবৃন্দাবন প্ৰাপ্তির পরীক্ষণেও সেই এক ভাব দেখা গিয়াছিল। নিয়মিত পাঠ, হরিনাম জপ, হরিনাম সঙ্কীৰ্ত্তন প্ৰভৃতি নিত্য নৈমিত্তিক কাৰ্য্যের কিছুই ব্যতিক্রম হয় নাই, এবং মনেরও কিছুমাত্র চাঞ্চল্য ঘটে নাই। সমগ্ৰ মন প্ৰাণ ঢালিয়া দিয়া র্যাহাকে ভালবাসিয়াছিলেন, বিবাহ হইতে চিরজীবন যিনি সদাসঙ্গিনী ছিলেন, তাহার দৈহিক বিয়োগ ইহাকে কিছুমাত্র বিচলিত করিতে পারে নাই। ইহার অষ্টাদশবর্ষীয়া কন্যা, কলিকাতায় দুরন্ত জররোগে আক্রান্ত হইয়া প্ৰাণত্যাগ করেন। কন্যার মূমুর্ষু অবস্থায় যখন সকলেই ব্যস্ত ও চিন্তিত, ’ ভাবী শোকের কৃষ্ণচ্ছায়ায় সকলেরই মুখ বিষন্ন ; কিন্তু র্যাহার কন্যা, তিনি আসনেই বসিয়া আছেন, নিয়মিতরূপে পাঠ ও হরিনাম জপ করিতেছেন, কোনই ব্যস্ততা বা চিন্তাভাব লক্ষিত হয় নাই । রোগীর প্রাণ-বায়ু বহির্গত হইলে বাড়ীতে যখন কান্নার রোল পড়িল, তখনও তিনি প্ৰশান্তমনে পাঠ করিতেছেন। মৃত্যুর ক্ষণকাল পরে গোসাইজী শিষ্যদিগের প্রতি এই আদেশ করেন, “যে ঘরে শব্ব আছে, সেই ঘরে একটু কীৰ্ত্তন কর।” কীৰ্ত্তন আরম্ভ হইলে ইনি সেই ঘরে আসিয়া প্ৰেমাবেশে নৃত্য করিতে লাগিলেন। ইহার তখন বাহ-চৈতন্য, কিছুই থাকে নাই। কীৰ্ত্তনান্তে